বৈদেশিক ঋণের দায়, আগামী দিনে স্বনির্ভর অর্থনীতিতে মনোযোগ দিতে হবে

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
বিগত সরকারের নেওয়া প্রায় সাড়ে ১২ লাখ কোটি টাকার দায় চেপে বসেছে দেশের ভোক্তা তথা জনগণের কাঁধে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি গত জুন পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৭৯ কোটি ডলারে বা ১২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়। এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে বর্তমান ও পরবর্তী সরকারগুলোকে। বস্তুত এসব ঋণ পরিশোধের বড় ধরনের চাপ পড়ছে রিজার্ভের ওপর। রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বেড়ে গেছে ডলারের দাম। ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পরিশোধ করতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। ডলার সংকটে নিয়মিত ঋণ শোধ করতে না পারায় এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ঋণের অর্থও বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি পণ্যসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিঘ্ন ঘটেছে শিল্পের বিকাশে। ফলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ। সব মিলিয়ে বেপরোয়া বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাশুল দিতে হচ্ছে জনগণকে।
বিগত সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সরকারি-বেসরকারি খাতে বেপরোয়াভাবে বৈদেশিক ঋণ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, চড়া সুদে নেওয়া এসব ঋণের একটি অংশ লুটপাট হয়েছে, পাচার করা হয়েছে বিদেশে। আগে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া কঠিন ছিল। বিগত সরকার এ ঋণের নীতিমালা শিথিল করে। ফলে বেপরোয়াভাবে ঋণ নেওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে ঝুঁকি বেড়েছে। দেশে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০১৪ সালে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮.৭ শতাংশ, যা এখন ৪০ শতাংশের উপরে। বস্তুত বেপরোয়া ঋণ গ্রহণ দেশের অর্থনীতিকে ফেলেছে প্রবল সংকটে। যতই দিন যাবে, এই ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। বিশেষ করে যখন মেগা প্রকল্পগুলোর মূল অর্থ পরিশোধ শুরু হবে, তখন পরিস্থিতি কেমন হয়, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে।
ঋণ পরিশোধে রিজার্ভে ডলারের টান কমাতে ভর্তুকি কমানোর পাশাপাশি করের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের দিকে মনোযোগী হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল বিগত সরকারের মধ্যে, যার প্রতিফলন দেখা গেছে বাজেটে। রাজস্ব বৃদ্ধিতে অযৌক্তিক নানা পদক্ষেপ জনমনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছিল। এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তী সরকারগুলোকে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া’র প্রবণতা। উন্নয়ন প্রকল্পে রাশ টানতে হবে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দ্বিগুণ/তিনগুণ ব্যয়ে সম্পন্ন করার যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল বিগত সরকারের মধ্যে, তার পরিবর্তে মিতব্যয়িতার পরিচয় দিতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে তা পরিশোধে যত্নশীল হতে হবে। আগামী দিনে সরকার ঋণনির্ভর না হয়ে স্বাবলম্বী অর্থনীতির দিকে মনোযোগ দেবে, এটাই কাম্য।