বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বায়নের যুগে র্যাংকিং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করে তোলে। শুধু তাই নয়, এটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও নীতিনির্ধারকদের জন্যও একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। পরিতাপের বিষয়, অনেকদিন ধরেই বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আমরা দেখছি না। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-২০২৫-এর তালিকার সেরা ৮০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া এশিয়ার সেরা ৩০০টির তালিকায়ও নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা, গবেষণা, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ইন্ডাস্ট্রি ইনকাম অর্থাৎ শিল্পের সঙ্গে গবেষণাকর্মের বাণিজ্যিকীকরণ-মূলত এই পাঁচটি মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক মান ও মূল্যায়নের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবছর র্যাংকিং প্রকাশ করে। আরও পরিষ্কার করে বললে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার মান, ইন্ডাস্ট্রি সংযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং করা হয়। এসব র্যাংকিংয়ের মানদণ্ডে কিছুটা তারতম্য থাকলেও মূল সূচকগুলো মৌলিকভাবে একইরকম। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পিছিয়ে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক হলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে আমরা দেখিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। মেধার ভিত্তিতে না দিয়ে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত এবং শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করা হয় না।
আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে না পারা এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বাজেটের অভাবসহ নানা কারণে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থান করে নিতে পারে না। মনে রাখা দরকার, সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের শ্রেষ্ঠত্ব বিভিন্ন দেশের শীর্ষ মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাও তাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি লাভ করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করে। সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ, গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা, গবেষণার মান, মানব কল্যাণে অবদান, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আগামীতে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যদি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানের উন্নতি হবে, সন্দেহ নেই।