এইচএসসি পরীক্ষার ফল
শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
গতকাল এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর গড় পাশের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। অবশ্য এর বেশকিছু কারণও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীর পড়াশোনায় সামান্য বিঘ্ন ঘটে। তাছাড়া শেষদিকের বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব হয়নি।
এসব কারণ দেখিয়ে স্বল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থী অটোপাশের দাবিও তুলেছিল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃতকার্য শিক্ষার্থীর ফলাফলকে অবমূল্যায়ন করা হবে বিবেচনায় তা গ্রহণ করা হয়নি। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, এ সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না; আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এখনই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর যারা কৃতকার্য হতে পারেননি, তাদের প্রতি হতাশ না হয়ে পরবর্তী বছরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান থাকল।
প্রতিবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকটের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সংকট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকে, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে, তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও এগিয়ে থাকতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য এবারও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শহরে ছুটতে হবে। এক্ষেত্রে তারা যাতে নিজ জেলা বা উপজেলায় অবস্থান করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে অর্থাভাবে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। অর্থাভাবে যাতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করেই তারা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যৎ জীবন গঠন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে বোঝা যায় বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ত্রুটি রয়েছে।
এই ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিতাপের বিষয়, পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা যতটা আগ্রহ প্রকাশ করেন, শিক্ষার মান নিয়ে তারা ততটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না। আদতে সংশ্লিষ্টদের মনোভাবে পরিবর্তন না এলে দেশে শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যুগোপযোগী শিক্ষার বিস্তারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।