রেলের ‘কালোবিড়াল’ আটক
শুধু বিচার নয়, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রেলের ‘কালোবিড়াল’ কথাটি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন চালু হয়েছিল। সেই আমলে রেলের চাকরি পাওয়ার বিনিময়ে দেওয়া প্রচুর টাকা পাওয়া গিয়েছিল এই মন্ত্রীর এপিএসের গাড়িতে। এ অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগও করেছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফল হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিগত সরকারের শাসনামলে সংঘটিত বড় বড় দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। রেলের কালোবিড়ালেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি আর কেউ নন, সাবেক আরেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম কিবরিয়া মজুমদার। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালানোর সময় শনিবার তাকে আটক করা হয়।
এই ‘কালোবিড়াল’ টানা প্রায় আট বছর মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে এ সময় রেলের বড় বড় ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ ও অন্য অনেক দুর্র্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের আশীর্বাদে তার কিছুই হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে ‘কালোবিড়াল’ আখ্যা পেয়েছিলেন। এই কালোবিড়াল যথেচ্ছ দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছিলেন, কারণ তার মন্ত্রী নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলেন। তার শারীরিক অক্ষমতার কারণে কিবরিয়া রেলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়েছিলেন। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা থাকাকালে তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন, সেসব যাত্রায় তিনি প্রচুর টাকা সঙ্গে নিয়ে সেখানে রেখে আসতেন। ঘুসের টাকা নিতেন তিনি ডলারে।
যতই দিন যাচ্ছে, গত শাসনামলের নানা অবিশ্বাস্য দুর্নীতির কথা বেরিয়ে আসছে। আলোচ্য কিবরিয়ার যাবতীয় দুর্নীতি এবং বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনাগুলো তদন্তের দাবি রাখে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বিদেশে গচ্ছিত তার টাকার সন্ধান পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমরা জানি, রেল দেশের এক বড় সেক্টর। এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এসব প্রকল্প থেকে ঘুস হিসাবে পাওয়া টাকার পরিমাণ নিশ্চয়ই কম নয়। নিয়োগ বাণিজ্যের ঘুস তো রয়েছেই। পাচার হওয়া এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে তা এক বড় ইতিবাচক মাত্রা যোগ করবে। দুর্নীতিগ্রস্ত কিবরিয়ার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তিও দাবি করছি আমরা।