বিগত সরকারের ‘আয়নাঘর’
চুলচেরা তদন্তে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হোক
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। বিগত সরকারের মদদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তির সন্ধান এবং গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণের ক্ষমতা দেওয়া হয় এ কমিশনকে। একইসঙ্গে কমিশনকে আয়নাঘরসহ যেসব স্থানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হয়েছিল, সেসব স্থানসহ দেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শনসহ যে কোনো ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়। ওই কমিশনের টার্মস অফ রেফারেন্স (কার্যপরিধি) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপনও। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এর মধ্যেই কমিশনের কাছে ৪০০ অভিযোগ জমা পড়েছে, যার অধিকাংশই আগে কখনো করা হয়নি। ভুক্তভোগীদের দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলের (আয়নাঘর) সন্ধান পেয়েছে কমিশন। এটি ডিজিএফআই’র সদর দপ্তরের ভেতরেই অবস্থিত। দোতলা ওই ভবনে ২২টি সেল আছে। তবে ৫ আগস্টের পর সেখানকার অনেক তথ্যই মুছে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কমিশনের কার্যপরিধি অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন, তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে কমিশনের দাবি-সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনে এ সময়সীমা আরও বাড়ানো হবে।
উল্লেখ্য, বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বছর দুই আগে সুইডেনভিত্তিক স্বাধীন নিউজ পোর্টাল ‘নেত্র নিউজ’ একটি অনুসন্ধানী হুইসেলব্লোয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করলে আয়নাঘরের বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে। অভিযোগ করা হয়, সরকারের শীর্ষমহলের মদদে দেশের ভিন্নমতের নাগরিকদের এ আয়নাঘরে বলপূর্বক আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। সেসময় নিউজ পোর্টালটি স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে গোপন কারাগারের সম্ভাব্য অবস্থানও প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানা মহল এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তা বানোয়াট বলে উল্লেখ করে বিগত সরকার। তবে সরকার পতনের পর অভিযোগের সত্যতা মিললে আয়নাঘর নিয়ে আলোচনা আবারও তুঙ্গে ওঠে। একে একে সামনে আসতে থাকেন গুমখানায় আটক ব্যক্তিরা। অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের ভয়াবহ ও রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনাও দেন।
শুধু সেনা এলাকাতেই নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেই এমন গুমখানা গড়ে তুলেছিল বিগত সরকার। তদন্তের স্বার্থে আলামত হিসাবে এসব গুমখানাকে ধ্বংস না করে রেখে দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। একইসঙ্গে এ তদন্তকাজে কেউ যেন ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার না হন, সেটিও কমিশনকে স্মরণে রাখতে হবে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্তের ভিত্তিতে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং অনিয়মের শিকার হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুবিচার নিশ্চিতে কমিশন চুলচেরা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তদন্তকাজ পরিচালনা করবে, এটাই প্রত্যাশা।