আইএমএফ মিশনের মূল্যায়ন
ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও দৃশ্যমান ও প্রকট হয়েছে। সরকারের ব্যয়ের পরিধি যখন বেড়েছে, তখন রাজস্ব আয় কমেছে। সরকারের বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য বকেয়ার স্থিতি বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আইএমএফ-এর আগ্রহ প্রকাশের বিষয়টি ইতিবাচক। সংস্থাটি বাংলাদেশকে আরও বর্ধিত কলেবরে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। সোমবার ঢাকা সফররত আইএমএফ মিশনের এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। সংস্থাটির চলমান ঋণ কর্মসূচির মূল্যায়ন, ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী বর্ধিত সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি ঢাকায় আসে আইএমএফ মিশন।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপে বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যের এখনো ঘাটতি থাকার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের চাপও বেড়েছে। আইএমএফ মিশনপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন সংস্কারধর্মী পদক্ষেপ নিলেও দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়ে পড়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আর্থিক খাতের দুর্বলতা সাম্প্রতিক সময়ে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে এবং তীব্র হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকার এবং আইএমএফ কর্মীরা এসব নতুন ও আগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নীতি ও সংস্কারের বিষয়ে উন্মুক্ত ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। এ চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে ক্রমাগত আর্থিক খাতে আরও কঠোর নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফ মিশনের প্রধান।
মিশনপ্রধান আরও বলেছেন, চলমান আইএমএফ সমর্থিত কর্মসূচির কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশে এর কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সংস্থাটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যার লক্ষ্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং টেকসই ও ন্যায়সংগত প্রবৃদ্ধির জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির কাছ থেকে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের সঙ্গে নতুন করে চাওয়া ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণপ্রাপ্তির বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। আশা করা হচ্ছে, নতুন করে চাওয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণও কাঙ্ক্ষিত সময়ে পাওয়া যাবে। ঋণপ্রাপ্তির শর্ত পূরণে সরকার আইএমএফ-এর কিছু পরামর্শ এড়িয়ে যেতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বিগত সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি করেছিল; সুশানের অভাবেও ওই সময় দেশে সৃষ্টি হয়েছিল নানা সংকট। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারকে অর্থনীতির স্বার্থে দেশের সর্বত্র সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।