Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

খেলাপি ঋণ নবায়নে ছাড় : এ প্রবণতা বন্ধ হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপি ঋণ নবায়নে ছাড় : এ প্রবণতা বন্ধ হোক

বিগত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উৎসাহে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর প্রবণতার কারণে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে পাহাড়সম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি তখন খেলাপি হওয়ার যোগ্য ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয়নি। এর ওপর বিশেষ ছাড়ের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ নবায়নও করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে গত বছর নবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছিল। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ বা খেলাপি কিস্তির অর্থ এককালীন বা ডাউন পেমেন্ট কম হারে পরিশোধ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ফলে এ সুযোগ নিয়ে ২০২৩ সালে ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়। ঋণ নবায়নের শর্ত অনুযায়ী পরবর্তী কিস্তি পরিশোধ না করায় একই বছরে ওইসব ঋণের মধ্যে আবার ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়ে। রোববার রাতে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির যে মহোৎসব হয়েছে, এ যেন তারই চিত্র।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২০১৮ সাল থেকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশকিছু ছাড় দেওয়া হয়। ২০২০-২২ সালেও অর্থাৎ করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার সময়েও বেশকিছু সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ঋণের বা কিস্তির অর্থ কম হারে পরিশোধ করে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নবায়ন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াও খেলাপি ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। খেলাপিরা এসব সুযোগ নিয়ে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করে, যা আগে কখনো করা হয়নি। উল্লেখ্য, নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, নির্ভয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নির্দেশনা দিয়েছিলেন, কোনো তথ্য যাতে গোপন করা না হয়। প্রতিবেদনে তার নির্দেশের প্রতিফলন ঘটেছে, বের হয়ে এসেছে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র। স্বভাবতই এটি বিগত সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে উলটো যাত্রা ছিল, সেটিকেই স্পষ্ট করে তুলেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব সিদ্ধান্ত ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমরা মনে করি, সমস্যার স্বরূপ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের চিহ্নিত করে অর্থ আদায়ে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। খেলাপিদের ঋণ নবায়নে যেসব বাড়তি সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছিল, কাদের প্ররোচনায় কারা এসব নির্দেশনা দিতে সহায়তা করেছিল, তাদেরও খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বিদায়ি সরকারের গভর্নর ঋণখেলাপিদের স্বার্থে যত সার্কুলার জারি করেছিল, তা-ও বাতিল করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, ব্যাংক দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি করার বিকল্প নেই। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম