সামগ্রিক রোডম্যাপ কবে?
রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও অনেক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও অনেক
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে এ সরকারের মেয়াদকাল, সংস্কার কাজ ও আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে নানা মহলেই প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। সেনাপ্রধান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকার্যে ও নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় প্রসঙ্গে এক ধরনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে সংস্কারকার্যের কিংবা নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে জনমনে কৌতূহল ক্রমেই বাড়ছে। অবশ্য শনিবার কিছুটা হলেও এ কৌতূহল নিবৃত করেছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এদিন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করেই শিগ্গির তা ঘোষণা করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছেন, নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই অন্তর্বর্তী সরকার তার লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এটি ঠিক, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের ত্রুটিযুক্ত শাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কার্যকর করে গড়ে তোলা রাতারাতি সম্ভব নয়। প্রয়োজন রয়েছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কারেরও। বলা বাহুল্য, এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব অনেক। যে কথা বৈঠকে উল্লেখ করেছেন এম সাখাওয়াত হোসেন। আবার সবক্ষেত্রে সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও রয়েছে পুরোনো ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা। সেটি সেই দলের ভেতরে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই হতে হবে। দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা জনমনে রয়েছে, তার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটাতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও এ উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে তাই রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মনোভাব, দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে আন্তরিকতা ও আস্থার পরিচয় এবং দল-মতের ঊর্ধ্বে ওঠার মতো মানসিকতার প্রকাশ ঘটানো জরুরি।
বস্তুত সংস্কারকার্যের গতি-প্রকৃতি, স্বচ্ছতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে সংস্কার টেকসই না হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। একইসঙ্গে যারা অতীতে রাজনৈতিক ফায়দালাভের উদ্দেশ্যে অন্যায়-অবিচার করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনা দরকার। বৈঠকে এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ কমিশন গঠনে ব্যক্ত করেছেন নিজের দৃঢ় অবস্থান। আমরাও মনে করি, শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে দেওয়ার যে ম্যান্ডেট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে, তা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত এ সংস্কারকার্যে সাড়া দেবে, সেই গতিতেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত হবে।