বিদ্যুতের মিটারের অবৈধ বাণিজ্য
জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিদ্যুতের মিটারের অবৈধ বাণিজ্য
বিদ্যুৎ খাতের নানা অনিয়ম-অপচয় ও বকেয়া বিল ঠেকাতে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। দুঃখজনক বিষয় হলো, এ মিটার কেনায় প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছে তখন থেকেই এ বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গতকালের যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার তৈরির নামে ‘মেইড ইন বাংলাদেশে’র আড়ালে ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশ থেকে নিুমানের মিটার কিনে সেগুলোর গায়ে মেইড ইন বাংলাদেশ লিখে তা দেশীয় পণ্য বলে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বেসিকো), বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), চীনের কোম্পানি হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড ও সেনজেন স্টার ইক্যুইপমেন্ট নামের এ চারটি কোম্পানি মিলে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এ লুটপাট আর পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ জালিয়াতচক্রের সামনে ছিলেন বিগত সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু। সম্প্রতি এ চক্রের বিরুদ্ধে বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি দামে ডিপিএম (ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) পদ্ধতিতে প্রিপেইড মিটার কেনাকাটার অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, জাল-জালিয়াতিসহ বিভিন্ন খাতে এ চক্রটি বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
খরচ কমানো এবং আমদানির পরিবর্তে দেশে বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগের অংশ হিসাবে কয়েক বছর আগে সরকার আলাদা দুটি কোম্পানি গঠন করে। পিপিআর-এর বিধিমালা তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশ পাওয়ার ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (বিপিইএমসি) থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ২ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট মিটার ক্রয় করে। মূলত আরইবির সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর এক বন্ধু এবং আত্মীয় পুরো বাণিজ্য সম্পন্ন করেন। দুই কোম্পানির নিজস্ব নিরীক্ষায়ও এ দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। দেশে সংযোজিত স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের দাম আমদানি করা একই ধরনের মিটারের চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে। কাঁচামাল ক্রয়ে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে না গিয়ে কেন সরাসরি উচ্চমূল্যে আমদানি করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসিকো বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মাধ্যমে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ করিয়েছে। একাধিক তদন্তেও প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ‘একটা চক্র গড়ে উঠেছিল।’ ফলে জাতীয় চাহিদাসম্পন্ন নীতি কখনো প্রণয়ন করা হয়নি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কোনো ব্যক্তিস্বার্থে বা কোনো গোষ্ঠীস্বার্থে। আলোচিত ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারাই জড়িত থাকুক, সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।