অশান্ত পাহাড়
পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও অশান্ত হয়েছে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-জেলা দুটিতে পাহাড়ি-বাঙালি দফায় দফায় সংঘর্ষে এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এ সময় শতাধিক দোকানপাট, বাড়িঘর ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে বান্দরবানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এদিকে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’। অন্যদিকে, একই দিন রাঙামাটিতে সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয় মালিক সমিতি। ফলে শনিবার সকাল ৬টা থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
উদ্ভূত সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে পাহাড়ের বাসিন্দাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর গণপিটুনি ও পরবর্তী সময়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানিতে সরকার গভীরভাবে দুঃখিত ও ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে এবং পার্বত্য জেলাগুলোয় বসবাসকারী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি পরিদর্শনে যান।
পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি ও পাহাড়িদের এমন সাংঘর্ষিক ঘটনা নতুন নয়। ইতঃপূর্বে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে প্রচুর। একটি সার্বভৌম দেশে পাহাড়ে দু’পক্ষের মধ্যকার এমন মুখোমুখি অবস্থান আমাদের স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন করে। তার ওপর সেখানে স্থানীয় সংগঠনগুলোর আধিপত্যলাভের চেষ্টা, সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোয় থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অপতৎপরতা রুখতে পাহাড়ে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সদা তৎপর থাকতে হয়। এমন অবস্থায় সেখানে বসবাসরত সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যকর ভূমিকা পালনের বিকল্প নেই। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোতে সেনা ক্যাম্প বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে।
স্মরণে রাখা দরকার, বিগত সরকার পতনের পর দেশ এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই তা করতে হচ্ছে। ফলে যে কোনো সহিংস পরিস্থিতির পেছনে কোনো দুষ্টচক্রের ইন্ধন রয়েছে কিনা, জাতীয় স্বার্থে তা-ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবারই অংশগ্রহণের গুরুত্ব রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতেই সর্বাগ্রে আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রেখে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়াই দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য। পাহাড়ে সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতির পেছনে যারাই থাকুক, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।