সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
সারা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মঙ্গলবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ১৭টি ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা। সিআরপিসির বিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। অর্থাৎ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, অপরাধীকে গ্রেফতার, জামিন-মুচলেকা ইত্যাদি বিষয়ে আইন মোতাবেক আদেশ জারি, তল্লাশি অভিযান পরিচালনা বা আটক করা, অন্যায়ভাবে আটককৃতকে উদ্ধারে অভিযানের মতো কার্যক্রম সেনাবাহিনী পরিচালনা করতে পারবে। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের জন্য এ ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারা দেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বা গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বর্তমানে কিছু কিছু অঞ্চলে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে নাশকতা, অরাজকতা এবং দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার মতো কিছু কর্মকাণ্ড ঘটছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য। একই কথা ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও।
বস্তুত মানুষ যাতে নিরাপদ বোধ করে এবং জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্ত সাধুবাদযোগ্য। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে ধরনের অরাজক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের তরফে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। বিগত সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে জনবলের স্বল্পতা লক্ষ করা গেছে। বিগত সরকারের সময়ে পুলিশের ভূমিকা ও পরবর্তীকালে সমাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির অভাবে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জনমনেও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছিল। ফলে দেশের সব জায়গায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আশা করা যায়, সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেনাবাহিনীর এ দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা লাভের পর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ক্ষমতার কোনো অপপ্রয়োগ ঘটবে না, এমনটাই প্রত্যাশা করি আমরা। অবশ্য জনগণকেও সর্বাত্মক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল ভোগ করবে দেশের মানুষই। একথা অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি জনবান্ধব সুশৃঙ্খল বাহিনী। তাদের সঙ্গে যোগাযোগে বা তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, এটাই প্রত্যাশা।