Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

পাউবোর অনিয়ম-দুর্নীতি

লাগাম টানতে কঠোরতার বিকল্প নেই

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পাউবোর অনিয়ম-দুর্নীতি

সারা দেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত প্রায় ৩৫ হাজার একর জমি ভূমি রাজস্বের এক পরিচালক বাগিয়ে নিয়েছেন। বুধবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ওই ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত একর জমি নামে-বেনামে, লিখিত ও মৌখিকভাবে লিজ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার এহেন দুর্নীতির কারণে কী পরিমাণ জমি বরাদ্দ বা লিজ দেওয়া হয়েছে, অবশিষ্ট জমির পরিমাণই বা কত, পাউবোর নিজস্ব তদন্তে এসবের কোনো হিসাবই মিলছে না। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী এবং গোপালগঞ্জের নাম ব্যবহার করে ওই ব্যক্তি কর্মস্থলে নিজের ক্ষমতার বলয় প্রসারিত করেছেন। এভাবেই ৩৫ হাজার একর জমির অলিখিত মালিক সেজে বসেন তিনি। জানা যায়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টেই আছে পাউবোর একশ একর জমি। একই প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ৫ বছরের জন্য ৪০ একর জমির লিজ নবায়নের মাধ্যমে তিনি পকেটস্থ করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

পাউবোর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা এই ব্যক্তি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতেন না। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে নিজেকে ক্ষমতাবান বলে জাহির করায় এতদিন তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পাননি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে তার অপকর্মের খতিয়ান প্রকাশ্যে আসছে। জানা গেছে, গত ৫ বছরে তিনি এ অবৈধ আয়ে বনানীতে বিলাসবহুল একাধিক ফ্ল্যাট, লাখ লাখ টাকার এফডিআরসহ দামি গাড়ি এবং নিজ গ্রামে দৃষ্টিনন্দন বাড়িও করেছেন। পাউবোতে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও তিনি অনিয়মের আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভূমি রাজস্ব কর্মকর্তার পাউবোর জমি লিজ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। সেক্ষেত্রে রাজস্ব বিভাগের একজন পরিচালক হয়ে তিনি কীভাবে জমি লিজ দিলেন এবং সম্পদের পাহাড় গড়লেন, তার তদন্ত হওয়া জরুরি। বস্তুত, পাউবোর অনিয়মের বিষয়টি বিগত সরকারের সময়েও ছিল ওপেন সিক্রেট। প্রতিষ্ঠানটির নানারকম অনিয়ম সম্পর্কে ইতঃপূর্বে পত্র-পত্রিকায় যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা এক কথায় ভয়াবহ। পরিতাপের বিষয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজরা শাস্তির সম্মুখীন হননি; বরং নানাভাবে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবেই এসব অনিয়মের ঘটনা এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটর করা উচিত। শুধু এই রাজস্ব পরিচালকই নন, পাউবোতে যারাই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে এ প্রতিষ্ঠান থেকে অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে না বলে মনে করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতির কারণে কেবল যে সরকারি অর্থের অপচয় হয় তা-ই নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে নানারকম জটিলতা ও ধীরগতির কারণে জনগণও হয় সেবাবঞ্চিত। পাউবোর বিরুদ্ধে অপচয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির বদনাম ঘোচাতে এবং মানসম্মত কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম