চালের দাম বৃদ্ধি: সিন্ডিকেটবাজি কি প্রথায় রূপ নিয়েছে?

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সিন্ডিকেটবাজি কি তাহলে এখনো চলছে? সম্প্রতি বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রমে চালের চাহিদা বেড়েছে। মজুত ও সরবরাহও পর্যাপ্ত। এমন অবস্থায়ও মিল পর্যায় থেকে বস্তাপ্রতি অর্থাৎ ৫০ কেজি মোটা চালের দাম ৩০০ টাকা বেড়েছে। এতে পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ায় খুচরা বাজারেও দাম বাড়ছে ক্রমাগত।
১৫ দিন আগেও খুচরা বাজারে স্বর্ণাজাতের মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৫০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শুধু স্বর্ণাজাতের মোটা চাল নয়, প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে কয়েক দিনে।
কথা হচ্ছে, মজুত ও সরবরাহ ঠিক থাকলে চালের দাম বাড়ছে কেন? বোঝাই যাচ্ছে, বাজারে সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আমরা সিন্ডিকেটের প্রবল প্রতাপ দেখেছিলাম। শুধু চাল নয়, প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে রেখেছিল নানা ধরনের সিন্ডিকেট। তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিন্ডিকেট ভাঙা খুব কঠিন কাজ। তার এ কথার প্রতিবাদও হয়েছিল দেশজুড়ে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছে, এবার বুঝি সিন্ডিকেটগুলোর দৌরাত্ম্য কমবে এবং নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেই আশা পূরণ হচ্ছে না। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশেষত স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছে চরম দুর্ভোগে। আমরা প্রত্যাশা করি, চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার গভীরভাবে খতিয়ে দেখে দাম কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, গত কয়েক মাস রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল, এখন তা স্বাভাবিক হচ্ছে, তাই বাজারের ওপর তদারকি বাড়াতে হবে। অনিয়ম করা হলে নিশ্চিত করতে হবে কঠোর শাস্তি।
আমরা কিছুদিন আগে দেখেছি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বাজারে গিয়ে এক ধরনের মনিটরিং করেছিলেন। এখন বাজারে তাদেরও দেখা যাচ্ছে না। বড় কথা, বাজার মনিটরিং শিক্ষার্থীরা কেন করবে? এর জন্য তো যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এসব কর্তৃপক্ষ কী করছে? বর্তমান সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে। সেই আস্থার মূল্য দিতে হবে অবশ্যই। চালসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে না পারলে সরকারের জনপ্রিয়তাও ধরে রাখা যাবে না। সুতরাং যে কোনো বিবেচনায় নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে হবে। সিন্ডিকেটবাজি একটা স্থায়ী প্রথায় রূপ নেবে, এটা হতে পারে না। সরকারকে তাই প্রয়োজনে কঠোরতম অবস্থান নিতে হবে।