দুর্নীতি দমনের নির্দেশ
কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারের সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কঠোরভাবে দুর্নীতি দমনের জন্য সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার সরকারের সচিবদের উদ্দেশে তিনি এ নির্দেশ দেন। তার এ নির্দেশ যথাযথভাবে পালনে তৎপর হতে হবে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর-অধিদপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। দেশের একটি প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। মানুষ প্রতিটি ক্ষেত্রে এর শিকার হয়। প্রধান উপদেষ্টাও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত।
তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। সুবিধা না দিলে সেবা মেলে না। এসব আর চলবে না। সরকারি অফিস হবে মানুষের ভরসাস্থল।’
প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য যে কতটা সত্য, তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন বিভিন্ন কাজে সরকারি সেবাপ্রত্যাশীরা। দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঘুস-দুর্নীতির চির অবসান চায় মানুষ।
বস্তুত দেশে শুধু প্রশাসন নয়, সরকারি অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চলে আসছে বহু বছর ধরেই। তবে বিগত সরকারের আমলে এটি অতীতের সব উদাহরণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রকল্পের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
নিয়োগ-বাণিজ্যও ছিল ওপেন সিক্রেট। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এমন হওয়া দরকার, যাতে কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি করার সুযোগ না থাকে; কেউ দুর্নীতি করলেও যেন পার পেতে না পারে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আইনের সংস্কার করতে হবে। কেননা দুর্নীতি সহায়ক আইন ও বিধিবিধান বহাল রেখে দুর্বল ও ক্রটিপূর্ণ আইন দিয়ে কার্যকর ও টেকসইভাবে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।
কার্যকর ও টেকসইভাবে দুর্নীতি দমনের জন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক ও আইনি সংস্কার এবং এ সংস্কার হতে হবে টেকসই। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি সহায়ক আইন তৈরি এবং দুর্নীতি রোধের আইন বাতিল করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রভাবিত করেন। বিগত সময়ে দুর্নীতি সহায়ক বেশকিছু আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্রটিপূর্ণ সরকারি চাকরি আইন এবং শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা। এসব আইনের সংস্কার প্রয়োজন। তবে আইনের শুধু সংস্কার করলেই হবে না, নিশ্চিত করতে হবে তার প্রয়োগ।
দুর্নীতি প্রতিরোধে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে হবে। এজন্য সংস্থাটিকে যথার্থই স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দুদক আইনেও আনতে হবে সংশোধনী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকা দরকার কমিশনের নিজের হাতে।
দুদক যাতে স্বাধীন ও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য সরকারের উচিত দুদকের কর্মকাণ্ডে কোনো হস্তক্ষেপ না করা। দুদকের কোনো কর্মকর্তা যাতে কোনো সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে অপরাধীকে ছাড় দিতে না পারে, সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রাখতে হবে নজরদারিতে। দুর্নীতি রোধে দুদককে পর্যাপ্ত ক্ষমতাসম্পন্ন করার বিকল্প নেই।