বৈষম্য ভাঙার অঙ্গীকার: নারী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নারী যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিকার। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় সমাজের উঁচু স্তরের নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা পেলেও আর্থিকভাবে ভঙ্গুর বহু পরিবারের নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা কতটা পেয়ে থাকেন, এটি এক প্রশ্ন। যারা নারীর অধিকার নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের মতে, দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন থাকলেও নারীর প্রতি সহিংসতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমছে না। নারীদের প্রতি সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইন দূর করাসহ সহিংসতা বন্ধে ১৩টি দাবি উত্থাপন করেছেন নারী নেত্রীরা। শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিটে রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হওয়া ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ শেষে সংসদ ভবন এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা এসব দাবি জানান। কিছু শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। এবারের পদযাত্রায় মশাল হাতে তারা শাহবাগ থেকে যাত্রা করে কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে অবস্থান নেন। মধ্যরাতে গান, ঢাকঢোলের শব্দে তারা বিভিন্ন দাবি জানান।
নারীর অধিকারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা প্রচলিত কুসংস্কার এবং বিভিন্ন বিষয়ের ভুল ব্যাখ্যা। নির্যাতিত নারীদের কেবল আইনগত সহায়তা প্রদান করাই যথেষ্ট নয়। তারা যাতে নির্যাতনের শিকার না হন, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। যেহেতু আর্থিকভাবে ভঙ্গুর পরিবারের নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বেশিমাত্রায় বৈষম্যের শিকার হন, সেহেতু অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ লক্ষ্য অর্জনে নারীদের মানসম্মত শিক্ষার আওতায় আনার পাশাপাশি তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। মোটকথা, নারী আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারলে তাদের সুরক্ষায় যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
নারী তার নিজের ভাগ্য গড়ে তুলতে সক্ষম, এটি বহু আগেই প্রমাণিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সমাজে এখনো বহু নারীর অবস্থা হতাশাজনক। এ বিবর্ণ চিত্র কেন আমাদের দেখতে হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজের সব স্তরের নারীরা তা ভোগ করতে পারছেন কিনা, এটিও এক প্রশ্ন। নারী অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। এর পরিবর্তনও জরুরি। কাজেই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ।