ঋণখেলাপিবিরোধী অভিযান: দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংক ঋণের নামে কী পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার হয়েছে, তা ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, স্পষ্ট হচ্ছে এর কারণও। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-পরিচিত প্রতিষ্ঠান তো আছেই, শিল্প জগতে যেসব প্রতিষ্ঠান পরিচিত নয়, সেগুলোও নামে-বেনামে এবং অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। স্বভাবতই এমন প্রতিটি কোম্পানিই এখন ঋণখেলাপি। জানা যায়, এসব ছাড়াও ব্যাংক খাতে শীর্ষ ৩০ ঋণখেলাপির একটি তালিকা গত ২৪ জুন তথা বিগত সরকারের সময়ে সংসদ অধিবেশনে উত্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ওই তালিকায় রাঘববোয়ালদের কারও নামই অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এর আগে ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদে যে শীর্ষ ২০ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানেও কোনো বড় খেলাপির নাম আসেনি। সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১৯ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সুবিধা দেওয়ার কারণে বড় ঋণখেলাপিরা আড়ালে থেকে যান। এভাবে একই সুবিধা ব্যবহার করে রাঘববোয়ালরা বরাবরই তালিকা থেকে বের হয়ে গেছেন।
ঋণখেলাপিদের প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অস্থিরতা কমিয়ে ব্যাংকগুলো সচল করা এবং এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরপর ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য ব্যাংক কমিশন গঠিত হলে ঋণখেলাপিদের বিষয়টিও আসবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যে জরুরি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। একইসঙ্গে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তারা আইনের আওতায় আসবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। তবে তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে সফলতার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়বে। বিগত সরকারের সময়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও খেলাপি ঋণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে কত রকমের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রকাশ্য। সংকট সমাধানে তাই সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিশেষ কমিশন গঠন অথবা বৃহত্তর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত ও বিচার করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিতের প্রক্রিয়াও বেগবান করা দরকার। বস্তুত দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই।
ভুলে গেলে চলবে না, দেশ থেকে ইতোমধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, অর্থ পাচারের ছিদ্রগুলো শনাক্ত করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কীভাবে, কোন কোন চ্যানেলে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দরকার সেই ফাঁকগুলো বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। খেলাপি ঋণ আদায় এবং অর্থ পাচার রোধ ও পাচারকৃত অর্থ ফেরতের বিষয়ে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, তা দ্রুত নেওয়া না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও মিলতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।