ভয়াবহ বন্যা
উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীসহ আট জেলায় কয়েক লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর তিন উপজেলার শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে সড়ক-ঘরবাড়ি। আটকে পড়া পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বাসিন্দাদের উদ্ধারে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও কোস্টগার্ড। ইতোমধ্যে ফেনী পৌর শহরও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
সেই সঙ্গে সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চলমান বন্যায় দেশের আট জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৯ লাখের বেশি। টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলরত আন্তঃনগরসহ সব ট্রেনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছাড়লেও বন্যার কারণে ট্রেনগুলো গন্তব্যে যেতে পারেনি। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত দেশে বন্যায় কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার পানিবন্দি মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করতে হবে এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে হঠাৎ অতিবৃষ্টি এবং উজানের ঢলে দেশে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য বারের মতো এবারও বন্যায় ৪০টির বেশি জেলা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। তথ্যের অভাবে বন্যার আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। দেশে কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত বেড়েছে।
জানা যায়, ভারতেও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। উজানের পানিতে আমাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। কুমিল্লার গোমতী নদীতে হুহু করে পানি বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের মতে, গত কয়েক দশকেও তারা এমন বন্যা দেখেননি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দ্রুত সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া। বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের সমস্যাগুলোর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বন্যাবিষয়ক আগাম তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলায় গোমতী নদীর উপর থাকা একটি বাঁধের গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে-দেশে এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ভারতের দাবি, এ তথ্য সঠিক নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে বেশ দূরে ১২০ কিলোমিটারেরও বেশি উজানে ডুম্বুর বাঁধের অবস্থান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, বুধবার থেকে পুরো ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে পানির চাপে বাঁধ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা যাই হোক, এ বন্যায় ভারতের সঙ্গে আমাদের আন্তঃনদী পানিবিষয়ক সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার প্রয়োজনীয়তাই স্পষ্ট হয়েছে।