দুদক সংস্কারের তাগিদ: মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠুক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দুর্নীতি দমনে স্বাধীন ও কার্যকর সংস্থা হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করার কথা থাকলেও বাস্তবে সংস্থাটিকে উলটো পথেই হাঁটতে দেখা যায়। ইতঃপূর্বে সংস্থাটিকে কার্যকর করে গড়ে তুলতে আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দুষ্টচক্র ভেঙে সংস্কারের মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে সংস্থাটির ভেতর থেকেই দাবি উঠেছে। এজন্য দুদকের বিধিমালার ৫৪(২) বিধি বাতিলসহ আইনের আরও বেশকিছু ধারা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অন্যদের মতো দুদক কর্মকর্তাদেরও সম্পদের হিসাব নিয়মিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; অভিযোগ বাছাইয়ে দুষ্টক্ষত দূর করা; আসামির বিদেশ যাত্রা বন্ধ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্মকর্তাদের কাজ মনিটরিংয়ের জন্য শক্তিশালী কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স গঠন।
এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংস্থাটি দুর্নীতিবাজদের কাছে ছিল আতঙ্ক। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে কাজের সুযোগ পেলে ‘রাঘববোয়াল’ ধরার নজিরও তাদের আছে। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সংস্থাটিকে ‘নখদন্তহীন’ হতে হয়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের সামনে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো খুবই জরুরি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল লড়াইয়ের স্বার্থে সংস্থাটিকে প্রথমে স্বাধীন ও শক্তিশালী হতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আনতে হবে স্বচ্ছতা। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সার্চ কমিটি গঠনের নিয়ম রয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে বলে বিশেষজ্ঞদের আগেই অভিযোগ ছিল। ফলে দুদকের প্রধান পদে নিয়োগের প্রশ্নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। এছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জারি করা এক আদেশবলে (স্মারক নং ৪৬৫৩৩) দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা, কমিশনের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা সচিবের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এর মাধ্যমে দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের ওপর আমলাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়া হয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কারণ প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা বেশি বলে ইতঃপূর্বে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ ছিল। কাজেই এ বিষয়টিরও সংশোধন প্রয়োজন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার জন্য দায়ী উচ্চমহলের তদবির এবং আমলা ও প্রভাবশালীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ। দুদকের এক সাবেক চেয়ারম্যান নিজেই এ কমিশনকে ‘দন্তহীন বাঘ’ বলেছিলেন। বস্তুত অতীতে দুদকের কর্মকাণ্ড দেখে এ কমিশনকে কাগুজে বাঘই মনে হয়েছে। আমরা দেখেছি-হলমার্ক, ডেসটিনির মতো প্রতারণার ঘটনায় দুদকের কঠোর হুঁশিয়ারির পরপরই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে অপরাধীরা আÍগোপনে চলে গেছেন। আমরা দুদককে নখদন্তযুক্ত হিংস্র কিংবা নখদন্তহীন কাগুজে বাঘ-এ দুইয়ের কোনোটির রূপেই দেখতে চাই না। আমরা চাই, দুদক একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসাবে, দুর্নীতি দমনে সুষ্ঠু ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করুক। এক্ষেত্রে প্রেষণে নিয়োগ বন্ধসহ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রয়োজনমাফিক যৌক্তিক সংস্কার কাম্য। কাজটি যদিও কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। দুদকের সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।