Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সরকারি কর্মচারী আইন

সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি কর্মচারী আইন

বছরের পর বছর শুধু ঘষামাজা ও ফাইল চালাচালি হলেও সম্পন্ন করা যায়নি সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাবসংক্রান্ত বিধিমালা হালনাগাদের কাজ। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব কীভাবে গোপন রাখা যাবে, তা নিশ্চিত করতেই আসলে যত বিলম্ব। তারা চান সম্পদের হিসাববিবরণী জমা দিলে তা যেন কোনোভাবেই জনসম্মুখে না আসে, সরকারের কাছে তারা এ সংক্রান্ত তথ্যের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা চাইছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সে ক্ষেত্রে কোন ফরম্যাটে সম্পদের হিসাব নেওয়া যাবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে। কারণ যেহেতু তারা দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করছেন, তাই সম্পদ গোপনের নিশ্চয়তা না দিলে যদি তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, দুশ্চিন্তায় মানসিক চাপে থাকেন, তাহলে সুষ্ঠুভাবে দাপ্তরিক কাজ সম্পাদনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব নিয়ে তা ব্যবস্থাপনার মতো জনবলেরও অভাব রয়েছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাববিবরণী প্রকাশে অনীহার কারণে আচরণ বিধিমালাটি আদৌ প্রণয়ন হবে কিনা, বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, দুঃখজনক হলেও ক্রমেই তা স্পষ্ট হচ্ছে। সুশাসনের প্রশ্নে এ ধরনের আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রের জন্য শুধু বিপজ্জনকই নয়, সংবিধানপরিপন্থিও বটে। শুধু তাই নয়, সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮-এর ৪১(১) ধারায় ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।’-বিষয়ক যে বিধান রয়েছে, তারও পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৎ কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই, এটি সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও। অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিরস্কার কিংবা বিভাগীয় শাস্তির মতো লঘুদণ্ডও সুশাসনের জন্য সহায়ক নয়।

সম্পদ বিবরণী প্রকাশে অনীহা, অনিয়মের অভিযোগ পেলে তা তদন্ত কিংবা প্রমাণে গ্রেফতারে পূর্বানুমতির আকাঙ্ক্ষা, প্রচলিত বিচারব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বিভাগীয় লঘুদণ্ডের বিধান কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আদর্শ হতে পারে না। কাজেই জনগণের সেবকদের এসব দাবিকে অগ্রাহ্য করে এবং সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮-এর ৪১(১) ধারাকে সংশোধন করে যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করি আমরা। বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সম্পদের হিসাব দাখিলের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও শ্রীলংকায় অনেক আগেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেসব দেশে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক। অথচ আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

বলা বাহুল্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারও কারও আয়বহির্ভূত সম্পদ লাভের যেসব খবর সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কার কী পরিমাণ সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে, তা প্রতিবছর সরকারকে জানানো জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মচারীদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদেরও সম্পদের বিবরণী এতে সংযুক্ত থাকা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, এ বিধিমালায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশেই সম্ভব হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম