অব্যাহত গ্যাস সংকট
দ্রুত নিরসন করুন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের তীব্র সংকট বিরাজ করছে। মূলত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়াই এর কারণ। এ সংকটের মধ্যেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাস সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
জানা যায়, জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহেশখালী ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে গেছে। উল্লেখ্য, এ টার্মিনাল থেকে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল।
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশনসহ সর্বত্র এর প্রভাব পড়লেও শিল্পকারখানার পরিস্থিতি সবচেয়ে সঙ্গিন। শিল্প মালিকরা বলছেন, কারখানার ব্রয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক কারখানায় চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে দেড় থেকে সাড়ে ৩ পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে, এমনকি তা শূন্যে নেমে গেছে কোথাও কোথাও। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে গ্যাসের এমন সংকট চলতে থাকলে শিল্প খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া; জরুরিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
দেশে ডলার আসার যে কয়টি ক্ষেত্র রয়েছে, তার মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অন্যতম। রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা যদি গ্যাস সংকটে ভোগে, তাহলে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি ডলার আয়ের প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাবও পড়বে অর্থনীতিতে। আবার গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে।
চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেওয়া শুধু নয়, বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। বস্তুত গ্যাসের এ তীব্র সংকট দ্রুত নিরসন করা না গেলে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তার অভিঘাত হবে সুদূরপ্রসারী।
কাজেই গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে দ্রুত। এ লক্ষ্যে মজুত গ্যাস উত্তোলনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্যাসক্ষেত্র ও সঞ্চালন লাইনে সমস্যা থাকলে তাও অবিলম্বে দূর করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন দ্রুত মেরামত করতে হবে। সরকার গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।