লেবার পার্টির বিশাল বিজয়: পরাজয় মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি অনুসরণযোগ্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ অর্থাৎ রক্ষণশীল দলের বড় ধরনের পরাজয় ঘটেছে। এ সম্পাদকীয় লেখার সময় পর্যন্ত লেবার পার্টি হাউজ অফ কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪১২টি পেয়ে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে বলা যায়। আর কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। ব্রিটেনের নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক অতি আগ্রহের বিষয়। প্রথমত, ব্রিটেনে অসংখ্য বাংলাদেশি দীর্ঘদিন থেকে ইমিগ্রান্ট হিসাবে বসবাস করছেন। দেশটির রাজনীতি ও প্রশাসনেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণ রয়েছে। যেমন, এবারের নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক টানা চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। টানা পঞ্চমবারের মতো জিতেছেন রুশনারা আলী, আরও জিতেছেন আফসানা বেগম।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ব্রিটেনে ওয়েস্ট মিন্সটার টাইপের গণতন্ত্র চালু রয়েছে। এ পদ্ধতির গণতন্ত্র আমাদের দেশেও চর্চা হচ্ছে। ব্রিটেনে দুই প্রধান বিরোধী দল-লেবার ও কনজারভেটিভই ক্ষমতা ভোগ করে থাকে, অর্থাৎ এ গণতন্ত্রকে বাই-পার্টি ডেমোক্রেসিও বলা যায়। কনজারভেটিভ দল গত টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। লেবার পার্টির মূল নেতা কিয়ার স্টারমার হতে যাচ্ছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের গণতন্ত্রের বড় সৌন্দর্য এই যে, ভোটে কোনো কারচুপি হয় না এবং পরাজিত দল ফলাফল মেনে নেয়। এবারও যেমন সম্পূর্ণ ফলাফল ঘোষণার আগেই ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিজয়ী লেবার নেতা স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা এখনো রপ্ত করতে পারিনি।
ব্রিটেনের এ নির্বাচনে একটি বড় ইস্যু বহুলাংশে দুই দলের ভাগ্য নির্ধারণ করেছে বলা যায়। আর তা হলো ‘রুয়ান্ডা নীতি’। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ব্রিটেনে রুয়ান্ডার আশ্রয়প্রার্থীদের স্বদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, লেবার পার্টি বলেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে এই নীতি বাতিল করা হবে। এই নীতির প্রশ্নে ব্রিটেন কার্যত দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।
কনজারভেটিভ দলের হেরে যাওয়ার পেছনে আরও কারণ রয়েছে অবশ্য। সেগুলোর একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা। অভিবাসী ইস্যুতেও দুই দলের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। তৃতীয়ত, কনজারভেটিভ দল টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় ভোটাররা শাসনব্যবস্থায় একটা পরিবর্তনও চেয়েছিলেন। তবে ওয়েস্ট মিন্সটার ডেমোক্রেসিতে একটা শুভংকরের ফাঁক রয়েছে বটে। এ গণতন্ত্রে পপুলার ভোটের সমানুপাতিক আসন সংখ্যা নির্ধারিত না-ও হতে পারে। এবার পপুলার ভোটের শতকরা হার হিসাব করলে কনজারভেটিভের পরাজয় অনেক বড় প্রতীয়মান হয়। লেবার পার্টি পপুলার ভোট পেয়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ ও কনজারভেটিভ প্রায় ২৪ শতাংশ। আসন সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে বিশাল ব্যবধান।
আমরা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আগাম অভিনন্দন জানাই। অন্যদিকে বিজিত কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতি রইল সহমর্মিতা। ব্রিটেনে নতুন যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, সেই সরকার দেশটির অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে সুবিবেচনার পরিচয় দেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নতুন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আমরা আশা করছি।