Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা

দ্রুত কাজে লাগানোর উদ্যোগ প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা

ফাইল ছবি

সুনীল বা সমুদ্র অর্থনীতির (ব্লু-ইকোনমি) সম্ভাবনা অনেক। এ নিয়ে বহু আলোচনা, সেমিনার হয়েছে; লেখালেখি হয়েছে পত্রপত্রিকায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমুদ্র অর্থনীতির তেমন কোনো সুফল আমরা ঘরে তুলতে পারিনি। মূলত মৎস্য আহরণের মধ্যেই সমুদ্রসম্পদ আহরণের বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে বলা যায়। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে না পারার কারণগুলো তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-দক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব, বিনিয়োগের অপ্রতুলতা, গবেষণা না হওয়া, অধিক জনসংখ্যার চাপ, দ্রুত নগরায়ণ, অপরিকল্পিতভাবে সমুদ্রসম্পদ আহরণ, জলবায়ু পরিবর্তন, কোস্টাল ইকোসিস্টেম রক্ষা না হওয়া, দূষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সব মহলের সমন্বিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, টেকসই অর্থনীতির জন্য টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা জরুরি। শুধু মৎস্য আহরণ নয়; জ্বালানি, কৃষি, পণ্য পরিবহণ ও পর্যটনসহ সমুদ্রকেন্দ্রিক অন্যান্য সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এ সংক্রান্ত পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠন করার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছেন তারা।

সুনীল অর্থনীতি হলো সমুদ্রসম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সাগরের জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। বস্তুত সাগর, মহাসাগর ও উপকূলের সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিচালিত কার‌্যাবলির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এ অর্থনীতি। এক্ষেত্রে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন ও সুযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। সুনীল অর্থনীতিসংক্রান্ত সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, এতে কৌশল হিসাবে বলা হয়েছে-সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি সবল নীতিকাঠামো প্রয়োজন। এ কাজ সম্পাদনের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই নীতিকাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদে পেশ করা হবে। সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে বিনিয়োগের বেশিরভাগই আসতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। নতুন জ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ আনার জন্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই’র ভূমিকা বিস্তৃত করা হবে ইত্যাদি।

আমরা জানি, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ২০২০ সালে ১০ ধরনের কৌশল নির্ধারণ করেছিল সরকারের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তবে সেসব এখনো কেবল পরিকল্পনা ও কৌশলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা মনে করি, এগুলোর বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে আমাদের সমুদ্রসম্পদ অন্য দেশে চলে যেতে পারে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্রনির্ভর। অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রসম্পদ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আয় করে থাকে। বাংলাদেশ জনবহুল রাষ্ট্র হওয়ায় সমুদ্রসম্পদ আহরণের প্রয়োজনীয়তা আমাদের আরও বেশি। অথচ এক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। এ অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। এক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ কাজে যেহেতু বিপুল অর্থ, জ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োজন, সেহেতু উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নিয়েই এগোতে হবে আমাদের। সেই কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে দ্রুত।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম