সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা
সুশাসনের স্বার্থে দ্রুত প্রণয়ন হওয়া প্রয়োজন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দীর্ঘ ছয় বছরেও সম্পন্ন হয়নি সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে দুবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি, দুবার আইন মন্ত্রণালয়, একবার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত; এমনকি বিধিমালাটির ওপর সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নেওয়া হলেও দিনের পর দিন শুধু ঘষামাজার মধ্যেই এটি প্রণয়নের কাজ ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন, এ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত এবং শিগ্গিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। তবে এটি প্রণয়নে কেন এমন দীর্ঘসূত্রতা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সবশেষ সরকারি চাকরি আইনের গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। আইনটি কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর। এ আইন কার্যকর করার পর প্রশাসন পরিচালনায় আগের প্রায় সব বিধি ও নীতিমালা হালনাগাদ করা অপরিহার্য হয়ে পড়লেও তা প্রণয়নে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
সাবেক সচিবরা বিধিমালা প্রণয়নে সময়ক্ষেপণকে অবহেলা ও গাফিলতি হিসাবে দেখছেন। সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে কর্মকর্তারা সুযোগ নিচ্ছেন, এমন অভিযোগও উঠেছে। এমনকি বিধিমালাটি আদৌ প্রণয়ন হবে কি না, সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা প্রণয়নে এত দীর্ঘ সময় ব্যয় স্পষ্টতই দুঃখজনক। যত দ্রুত সম্ভব আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করি আমরা। তাছাড়া এতে সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান থাকাও জরুরি। বিশ্বের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সম্পদের হিসাব দাখিলের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও শ্রীলংকায় অনেক আগেই এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেসব দেশে সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক। অথচ আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।
আগের আচরণ বিধিমালায় কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার বিধান থাকলেও তা ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সম্প্রতি কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর আয়বহির্ভূত সম্পদের যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে কার কী পরিমাণ সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটেছে, তা প্রতিবছর সরকারকে জানানো জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মচারীদের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদেরও সম্পদের বিবরণী এতে সংযুক্ত থাকা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, এ বিধিমালায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা অনেকাংশেই সম্ভব হবে।