প্রধানমন্ত্রীর ফলপ্রসূ ভারত সফর
অমীমাংসিত বিষয়গুলোরও সমাধান হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভারতে দুই দিনের সরকারি সফর শেষে শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদি ভারতে সরকার গঠনের পর সংক্ষিপ্ত হলেও এটাই ছিল তার প্রথম সফর। এর আগে একই মাসে মোদি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে শনিবার একান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বাণিজ্য ও সংযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দুদেশের নেতা। এ সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে তাদের উপস্থিতিতে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরও হয়েছে। যার মধ্যে ৭টি-ই নতুন। বাকি তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। নতুন সমঝোতা স্মারকের মধ্যে যেমন বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সামুদ্রিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং গবেষণার বিষয় আছে, তেমনি রয়েছে ডিজিটাল পার্টনারশিপের পাশাপাশি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুদেশের সবুজ অংশীদারত্বের অভিন্ন ভিশনের বাস্তব রূপ দিতে রেল সংযোগের বিষয়ও। এছাড়া যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতা; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামরিক শিক্ষাসংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয় সমঝোতা স্মারকে স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি মৎস্য সহযোগিতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধের সহযোগিতার ক্ষেত্রে তিনটি সমঝোতা স্মারক এ সময় নবায়ন হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা ছাড়াও উভয় দেশই একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে ‘রূপকল্প ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। এর মাধ্যমে ‘ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ এবং ‘সবুজ অংশীদারত্ব’বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্প সামনে রেখে দুদেশ কাজ করবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আশ্রয় প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতাই শুধু নয়, পরবর্তীকালেও ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেশী দেশটি নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল ছাড়াও উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন মনোভাব পোষণ করে। ভারত আজ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিগত মিলও উল্লেখ করার মতো। এ ছাড়া চিকিৎসা ও ভ্রমণসহ নানা কারণে দুদেশের জনগণের মধ্যে রয়েছে অবাধ যাতায়াত। অবশ্য তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন, সীমান্তে হত্যা ও শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকারের মতো কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েই গেছে। দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে উচ্চতর মাত্রা দিতে এ বিষয়গুলোরও আশু নিষ্পত্তির প্রয়োজন রয়েছে। ইতঃপূর্বে নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টিকে বার্লিন দেওয়াল পতনের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আমরাও মনে করি, বিশ্বায়নের এ যুগে দুদেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী কোনো দেওয়াল থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঝুলে থাকা দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এসব বিষয় এবার মীমাংসা করবেন-এটাই প্রত্যাশা।