ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট
সব ধরনের অনিয়ম দূর করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্য সংকট বিরাজ করছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কারণ এর ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড; বিপর্যয় দেখা দিয়েছে উৎপাদন খাতে; সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান। অথচ সরকারি ও বেসরকারি খাত এবার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ঋণ নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাত দুর্বল হয়ে পড়ায় অর্থনীতিতে চাহিদা অনুযায়ী ডলার আর টাকার জোগান দিতে পারছে না।
বস্তুত অনিয়ম, দুর্নীতি ও আস্থাহীনতায় তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীর। আবার অনেক ব্যাংক ডলার কিনতে প্রচুর নগদ টাকা খরচ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চে ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই সময়ে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো গড়ে আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আমানতের পুরোটা ঋণ হিসাবে বিতরণ করতে পারে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একটি অনিয়ম হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটি বড় অংশ আটকে আছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পারছে না। ফলে এ খাতে আয় হচ্ছে না।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সুশাসনের মাধ্যমে এ খাতে সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি বন্ধ করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হতে হবে। অর্থ পাচার রোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। আর এসব বিষয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর ভূমিকা কাম্য। রাজনৈতিক বিবেচনায় অথবা অন্য যে কারণেই হোক, কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া চলবে না। ব্যাংক খাত হলো দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এ খাত দুর্বল থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতির ভিতও দুর্বল হতে বাধ্য। তাই ব্যাংক খাত রক্ষায় কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।