প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন
সব পক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ আজ। দেশের ১৫২ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া নানা কারণে আরও আট উপজেলায় এ ধাপে ভোট হচ্ছে না। তাই এ ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট হচ্ছে। এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত হলেও বিষয়টি নিয়ে জনমনে তো বটেই, খোদ স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যেও বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-প্রথম ধাপের নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে বিভিন্ন জেলায় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের চাহিদার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচনি এলাকার পরিধি, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাড়তি এ চাহিদার কথা নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছেন। জানা যায়, অন্তত ৩০ উপজেলায় বাড়তি ফোর্স মোতায়েনের তাগিদ রয়েছে। ইসিও ভোটগ্রহণের দিন পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি চাহিদা মেটাতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে। অবশ্য ভোটের পরিবেশ নিশ্চিতে সোমবার থেকেই মাঠে নেমেছেন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। প্রথম ধাপে দেড় লাখের বেশি আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটকেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১০ মে পর্যন্ত তারা মোতায়েন থাকবেন।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ অমূলক নয়। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা তো বটেই, এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও যেন সম্পৃক্ত ও প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, এজন্য দলটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সতর্ক করেছেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদকও। মুশকিল হচ্ছে, এমন সাবধানবাণী ও সতর্কতা সত্ত্বেও নির্বাচনকে ঘিরে কোনো কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার প্রভাব বিস্তারের কথা সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে, যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আমরা দেখেছি, দুই সপ্তাহ আগেও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচনের প্রতিটি ধাপের ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সব মিলে আগাম সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও ভোটের পরিবেশ কতটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, তা দিন শেষেই বোঝা যাবে।
উল্লেখ্য, প্রথম ধাপে ২২টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এবং বাকি উপজেলাগুলোয় কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। স্বাভাবিকভাবেই এমন আগাম আশঙ্কার ওপর ভর করে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা ইসির জন্য চ্যালেঞ্জই বটে। এজন্য আগাম প্রস্তুতিও নিশ্চয়ই নেওয়া হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এ প্রস্তুতিই শেষ কথা নয়। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে ইসি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে নির্বাচনের প্রতিটি ধাপই শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও সংযত ও সহযোগিতামূলক আচরণ করা উচিত বলে মনে করি আমরা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।