Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি

পুনর্বিবেচনা করা হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম-ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১ টাকা এবং পেট্রোল ও অকটেনের দাম আড়াই টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে।

বস্তুত এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে যানবাহন ও শিল্প খাতে। যানবাহনের ভাড়া বাড়লে এবং শিল্প খাতের উৎপাদন খরচ বাড়লে এর প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। বাড়তি ব্যয়ের অর্থ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জনগণের কাছ থেকেই আদায় করবে। শুধু তাই নয়, এ মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে যৌক্তিক ও অযৌক্তিকভাবে বিভিন্ন খাতে সেবার দামও বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে শিল্প খাতে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বেড়ে যেতে পারে। আমদানির প্রবণতা বাড়লে ডলার সংকটসহ নানা সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

দেশে উৎপাদিত পণ্যের তুলনায় কম দামে আমদানি পণ্য পাওয়া গেলে মানুষ বিদেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকবে। কাজেই দেশের শিল্প খাতের সক্ষমতা যাতে না কমে সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বহুদিন ধরে বেসরকারি খাতে আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ চাহিদা অনুযায়ী শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া যায় না।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা মনে করি, তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। কারণ জ্বালানি ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়টি সরসরি জড়িত।

আমদানিনির্ভরতা কাটানো না গেলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। টেকসই জ্বালানি খাত গড়ে তুলতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর বিকল্প নেই। দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে জ্বালানি খাতে আমাদের আমদানিনির্ভরতা কাটানো সম্ভব। বহুদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, দেশে গ্যাসের সংকট কাটাতে এলএনজি আমদানিতে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদে এমন নির্ভরতা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হলে আমাদের দেশীয় জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে তৎপরতা বাড়াতে হবে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদও তৈরি করতে হবে।

বর্তমানে স্বল্প আয়ের মানুষ বহু কষ্টে নিত্যপণ্য ক্রয় করে থাকেন। কাজেই জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে কেউ যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে না পারে কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম