কাতারের আমিরের সফর
আরও দৃঢ় হোক দুদেশের সম্পর্ক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ কাতারের আমিরের দুদিনের বাংলাদেশ সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও কাতার পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ অনুষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রত্যক্ষ করেন। চুক্তিগুলো হলো-দুই দেশের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমুদ্র পরিবহণ, পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা। সমঝোতা স্মারকগুলোর (এমওইউ) মধ্যে রয়েছে-জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম), বন্দর (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ), দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়াক্ষেত্র এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।
প্রতিবছর বাংলাদেশ কাতার থেকে বিপুল পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে থাকে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৭ সালে ১৫ বছরের জন্য একটি চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ৪০ কনটেইনার জ্বালানি আমদানি করছে বাংলাদেশ। এমন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আলোকে আমরা লাভবান হতে পারি। বাংলাদেশের একটি অন্যতম বড় শ্রমবাজার কাতার। সেখানে বর্তমানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। দক্ষ শ্রমিকদের তুলনায় তারা সেখানে কম বেতন ও অন্যান্য সুবিধাও কম পেয়ে থাকেন। দেশটিতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কাতারে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শিক্ষা ও গবেষণায় কাতার অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। দেশটির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী কাতারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ পেতে পারেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। কাতারের আমিরের এ সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। অনেক দেশ থেকে কাতার খাদ্যপণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকেও কাতারে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। দেশটির আমদানি-রপ্তানির বড় অংশই হয় বেসরকারি খাতে। কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়লে দুদেশই উপকৃত হবে।
দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং আমিরের সফরকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে তার নামে রাজধানীতে একটি পার্ক ও সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। মিরপুরের কালশী এলাকার বালুর মাঠ নামক স্থানে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরপুরের ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে কাতারের আমিরের নামে। এখন থেকে এ সড়ক ও পার্ক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অ্যাভিনিউ এবং শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে। কাতারের আমিরের সফরকে বিনিয়োগের সম্ভাবনা হিসাবে দেখছেন বহু বিনিয়োগকারী। ব্যবসা ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ যাতে উপকৃত পারে, সে জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা দরকার।