ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন
কর্মমুখর হয়ে উঠুক রাজধানী
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশবাসী এবার বেশ শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল ফিতর ও নববর্ষ উদযাপন করতে পেরেছেন, এটি স্বস্তির বিষয়। ঈদের ছুটিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া দেশে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি অতীতের তুলনায় কম হয়েছে। অবশ্য যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকায় ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যানজট মানুষের কষ্টের কারণ হয়েছিল। অতীতের মতো বড় আকারে রেলের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়নি এবার। নৌপথেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা। পরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য এবং সড়ক দুর্ঘটনা ও তাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যথারীতি। বস্তুত সড়ক দুর্ঘটনা শুধু ঈদের সময় নয়, প্রতিদিনই ঘটছে। এ সমস্যা থেকে কবে আমাদের পরিত্রাণ মিলবে, এটা এক প্রশ্ন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কী করণীয়, তা আরও গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।
পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষ উপলক্ষ্যে টানা কয়েক দিনের ছুটি শেষে গতকাল সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে যাওয়ায় মানুষ রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা হয়তো আরও কয়েকদিন পর ফিরবে। এবার ঈদ উৎসবের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ছায়ানটের পাশাপাশি বেশকিছু সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের নানা উৎসব আয়োজন চলে। পহেলা বৈশাখের মতো অসাম্প্রদায়িক উৎসব নিয়ে কিছু মানুষ বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করলেও এ উৎসবের সর্বজনীন বিষয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
ঈদের ছুটিতে রাজধানীসহ বড় শহরগুলো অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেলেও গ্রামাঞ্চলে জনজীবন হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর। তাপপ্রবাহজনিত বিড়ম্বনার কথা বাদ দিলে দেশের সর্বত্র ঈদ উদযাপিত হয়েছে যথারীতি আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে। ঈদ উপলক্ষ্যে অনেক প্রবাসী দেশে এসেছেন স্বজনদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে। এটিও একটি ইতিবাচক দিক। বস্তুত ঈদের সময় সারা দেশে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়। খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহণ খাতে ব্যয় হওয়া এসব অর্থের জোগানদাতাদের মধ্যে প্রবাসীরা ছাড়াও রয়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবী। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতবদল হয়। এতে চাঙ্গা হয় দেশের অর্থনীতি, যা ঈদ উৎসবের একটি ইতিবাচক দিক। অতীতে সাধারণত ঈদুল ফিতরের কয়েক মাস আগে থেকেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ বৃদ্ধি পেত। এখন আর সেই প্রবণতা লক্ষ করা যায় না। এটি চিন্তার বিষয়। ধারণা করা হচ্ছে, হুন্ডির কারণেই এমনটি ঘটছে। অবশ্য ঈদের আগে চাঙা ছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। প্রবাসীরা যাতে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠান, এ বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
এবার ঈদ ও নববর্ষের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আশা করা যায়, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। কোনো কোনো পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের নানা রকম দুর্ভোগের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। এ খাতে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। ঈদে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো ছিল। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকলে যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা জোরদার করা কঠিন নয়, সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।