পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা: কঠোর হাতে দমন করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পার্বত্য চট্টগ্রামের রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি এবং ম্যানেজার অপহরণের ঘটনার পর সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-রাতে কেএনএফ সদস্যরা থানচি থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি শুরু হয়। এছাড়া গভীর রাতে আলীকদমের ২৬ মাইলের ডিম পাহাড় এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। স্বস্তির বিষয়, এসবের মাঝেই সন্ধ্যায় রুমার বেতেলপাড়া থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এদিকে পাহাড়ের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আতঙ্কে জনশূন্য হয়ে পড়েছে থানচি বাজারসহ আশপাশের এলাকা।
রুমা ও থানচির সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো যে অত্যন্ত উদ্বেগজনক, তা বলাই বাহুল্য। এসব নিছক অপরাধই নয়, পাহাড়ে শান্তি ও দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপও বটে। কেএনএফ ২০২২ সালে বান্দরবানে আত্মপ্রকাশের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলার সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে। আমরা মনে করি, পাহাড়ে সহিংসতার এক বড় কারণ সেখানে অস্ত্রের সহজলভ্যতা। বিস্তীর্ণ অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবাধে অস্ত্র প্রবেশ করে। তাই অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। স্মরণে আছে, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার ফলস্বরূপ ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে। এরপর দীর্ঘদিন পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করেছে।
বিরাজমান পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে শান্তিপূর্ণ সমাধান আদৌ কাজে দেবে কিনা সন্দেহ আছে। পাহাড়ে কেএনএফ যেভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে, তা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ অঞ্চলে আরও শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, কয়েকটি দেশের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ পার্বত্য অঞ্চলকে ঘিরে ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। সরকার এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও তা সংরক্ষণে উদ্যোগী হবে, এটাই প্রত্যাশা।