সরবরাহ থাকলে আমদানি কেন?
বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থেই কি এ সিদ্ধান্ত?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আলু ও পেঁয়াজ নিয়ে একটা প্যারাডক্স লক্ষ করছি আমরা। চলতি বছর দেশে আলু ও পেঁয়াজের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে বাজারে এ দুই নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি থাকার কথা নয়। অথচ সরকার এখন ভারত থেকে আলু-পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৪০০ টন আলু আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ৩৩২ টন আলু ভারত থেকে চলেও এসেছে। অন্যদিকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ টন। বাকি পেঁয়াজ পাইপলাইনে আছে। বলা বাহুল্য, পেঁয়াজ এখনো আহরণ করা হচ্ছে, তবে সবশেষে সামান্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু আলুর কোনো সংকট নেই। এটাই যখন বাজারের বাস্তবতা, তখন এ দুই নিত্যপণ্য আমদানি করতে হবে কেন?
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেছেন, আমরা বারবার বলেছি মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ ও আলু আমদানি করা যাবে না। কারণ এ দুই খাদ্যপণ্যের আহরণ চলছে। খেত থেকে সব উঠানো হয়নি এখনো। ফলে এখন আমদানি হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম পাবেন না।
আমাদেরও একই প্রশ্ন। ভারত থেকে এখন আমদানি করা হলে সেদেশের কৃষিকে উৎসাহিত করা হবে, বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের কৃষি ও কৃষক। টিসিবির প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা আর বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা। সরকার চাইলে দেশের বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে।
পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে, তবে সেটা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওদিকে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১০ টাকা আর কৃষক পর্যায়ে তা বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৮ টাকা। তাহলে বাজারে আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কেন? মাঝখানে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কারা পায়? তবে কি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে?
অনেকের আশঙ্কা, উদ্দেশ্যমূলক এসব আমদানির আড়ালে অর্থ পাচারের একটা দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার একটা নিরাপদ উপায় হলো আমদানি। বিষয়টা আমাদের কাছে গোলমেলে ঠেকছে। অর্থনীতির কোনো সূত্রেই পড়ছে না এই আমদানির বিষয়টি।
প্রকৃত প্রস্তাবে, দেশে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র বা কারসাজির খবর আমরা জানি। ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি সে ধরনের কারসাজি কিনা, সরকারের দায়িত্বশীল মহলকে তা খতিয়ে দেখতে হবে।