ঋণের সুদহার বাড়ছেই
এটি শিল্পায়নবান্ধব পদক্ষেপ নয়
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![ঋণের সুদহার বাড়ছেই](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/04/02/image-791476-1712012087.jpg)
ফাইল ছবি
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ঋণের সুদহার আরও বাড়ানো হয়েছে, যা গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-এই দফায় সুদহার বাড়বে দশমিক ৪৪ শতাংশ। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদ ওই হারে বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদহারও। নতুন সুদহার নির্ধারণের ফলে সাধারণ ঋণের সুদহার ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে। পল্লি ও কৃষি ঋণের সুদহার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। প্রি-শিপমেন্ট ঋণের সুদহার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ভোক্তা ঋণের সুদহার ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতিমাসেই সুদহার বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এভাবে এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার বেড়েছে দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ অবস্থায় শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, এভাবে সুদের হার বাড়তে থাকলে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে; বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সুদহার আরও বাড়লে তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে; উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে; রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে দেশ। এমনিতেই এখন সেভাবে নতুন শিল্প হচ্ছে না। ডলারের অভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে। কাজেই ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমলে কর্মসংস্থানে এর প্রভাব পড়বেই।
উল্লেখ্য, দেশের বেশির ভাগ উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে বহু উদ্যোক্তা এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে। যারা অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সময়মতো উৎপাদনে যেতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের ওপর ঋণের বাড়তি বোঝা চাপলে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা স্বভাবতই বেড়ে যায়।
আমরা মনে করি, কোনোভাবেই উচ্চ সুদ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না। তাই সুদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের শিল্প খাত যাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বস্তুত ব্যাংকগুলো অধিক হারে সুদ আরোপ করেই ক্ষান্ত হয় না, পদে পদে সার্ভিস চার্জ আরোপের মাধ্যমে আগ্রাসী আচরণও করে থাকে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব দিকেও দৃষ্টি দেওয়া। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়েই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। সর্বোপরি উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে সরকার ঋণের সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।