Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

দূষণের উদ্বেগজনক তথ্য: পরিবেশ সুরক্ষায় আশু পদক্ষেপ কাম্য

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দূষণের উদ্বেগজনক তথ্য: পরিবেশ সুরক্ষায় আশু পদক্ষেপ কাম্য

বিশ্বব্যাংকের ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে। বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণে এ মৃত্যু হচ্ছে। পরিবেশগত কারণে ক্ষতির পরিমাণ দেশের ২০১৯ সালের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমপরিমাণ। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্যের ওপর, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী। এটি ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের আয়োজনে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, উদ্বেগজনক মাত্রার দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, ৫ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক ও নারীদের। বলা বাহুল্য, পরিবেশ দূষণের প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনে, যে কারণে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ অনেক ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা না রাখলেও বাধ্য হয়েই দেশকে ক্ষতির বোঝা ঘাড়ে নিতে হচ্ছে। আবার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জলবায়ু তহবিলের যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তার ৪০ শতাংশই হচ্ছে ঋণ। এটা কাম্য হতে পারে না। এটাও ঠিক, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের নিজেদের উদ্যোগও আশাব্যঞ্জক নয়। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারে এ বিষয়টি অবহেলিত; কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে যে তা টেকসই হতে পারে না, পৃথিবীর অনেক দেশেই তা প্রমাণিত। কাজেই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করা যাবে না। তাই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয়রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দূষণের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে উন্নত বিশ্ব নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে; অথচ এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান একদম তলানিতে। সবশেষ প্রকাশিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্সে দূষণ রোধের অগ্রগতি সূচকে তলানির দিক থেকে দ্বিতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। এতেই প্রতীয়মান হয়, উন্নয়ন ও পরিবেশকে সমান গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। ভুলে গেলে চলবে না, পরিবেশ দূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য, অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য ও অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লার কারণে দেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটছে।

এমন অবস্থায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও জরুরি হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) ও সিসা দূষণ নিয়ন্ত্রণেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রান্নায় সবুজ জ্বালানি ব্যবহার এবং শিল্পকারখানা থেকে দূষণ রোধে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমেই দেশের পরিবেশ দূষণের ধারা পালটে ফেলা সম্ভব। সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগ ও প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম