নানা চ্যালেঞ্জে শিল্প খাত
ঋণের সুদহার সহনীয় হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের শিল্প খাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টির বিষয়টি উদ্বেগজনক। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর যে কৌশল নিয়েছে, তাতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এ খাত। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় সব ধরনের ঋণের সুদহার লাগামহীন গতিতে বাড়ছে। সাত মাসের ব্যবধানে আমদানি ও বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার ৪ এবং শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণের সুদহার ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। রপ্তানিতে প্রাকজাহাজীকরণ খাতে ঋণের সুদ ৮ শতাংশের বেশি, ইডিএফ সুদহার দ্বিগুণের বেশি, কৃষি ঋণের সুদহার ৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণের সুদের হার ৬-৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সুদের হার মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে পণ্যের দাম। এতে একদিকে যেমন রপ্তানির বাজারে দেশের পণ্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে, তেমনই দেশের বাজারে এ প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়েছে। এছাড়া পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মন্দায় ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে নিট বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। এতে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় নগদ টাকার প্রবাহ কমেছে। একদিকে বেসরকারি খাত থেকে সরকারকে দেওয়া রাজস্বের জোগান কমেছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকার প্রবাহ কমেছে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধেও উদ্যোক্তারা চাপে পড়েছেন।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ১ জুলাই থেকে ঋণের সুদহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একই সঙ্গে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি গ্রহণ করায় বাজারে টাকার প্রবাহ কমেছে, বেড়েছে সুদহার। এমন অবস্থায় উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের রপ্তানি খাত এমনিতেই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে। বৈশ্বিক মন্দায় রপ্তানির আদেশ কমছে। সুদহার বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনই ডলার সংকটেও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রন্ত হচ্ছে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্প এখন খুবই সংকটে। এর মধ্যে সুদহার বাড়ায় এ খাতের খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
বিদ্যমান বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি এবং ডলারের দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে; অন্যদিকে দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদন খরচকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ওপর ঋণের সুদের হার লাগামহীন বৃদ্ধি স্পষ্টতই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’, তা বলাই বাহুল্য। আমরা মনে করি, আইএমএফ-এর শর্ত নয়, দেশের শিল্প খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তাদের সংকট যেভাবে মোকাবিলা করে রপ্তানি বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ঋণের সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা তো বটেই, প্রয়োজনে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতিকে বেগবান রাখতে হলে শিল্প খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে সব সময় ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সংকট নিরসনে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।