রেস্টুরেন্টের অগ্নিনিরাপত্তা
বেইলি রোডের ঘটনাকে সতর্কবার্তা হিসাবে নিতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পৃথিবীর বহুদেশে বহুতল ভবনে মাঝেমধ্যেই সাইরেন বাজিয়ে পরীক্ষা করা হয় ভবনটিতে আগুন লাগলে সেখানে যারা অবস্থন করেন, তারা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারেন কি না। এটা স্রেফ পরীক্ষামূলক একটি মহড়া। রাজধানী ঢাকা শহরে এন্তার বহুতল ভবন রয়েছে; কিন্তু এ ধরনের মহড়ার কথা এখনো আমরা শুনিনি।
সবচেয়ে বড় কথা, এসব ভবনে আগুন লাগলেও সাইরেন বাজিয়ে কোনো লাভ হবে না, কারণ ভবন থেকে বেরোনোর জরুরি নির্গমন পথই নেই।
উদ্বেগের বিষয়, রাজধানীতে অসংখ্য বহুতল ভবনে রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট। ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোডের একটি ভবনেই রয়েছে ২০টি রেস্টুরেন্ট। বলা বাহুল্য, রেস্টুরেন্ট মানেই সেখানে খাবার খেতে আসবেন অনেকেই। অর্থাৎ যে ভবনটিতে ১০টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে, সেখনে লাঞ্চ বা ডিনার খেতে আসা মানুষের সংখ্যা হবে কয়েক শ।
সেক্ষেত্রে জরুরি নির্গমন পথ না থাকায় ওই ভবনে আগুন লাগলে কিছু মানুষ যে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাবেন, তাতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। শুধু জরুরি নির্গমন পথ না থাকাই নয়, বহুতল ভবনগুলোয় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা সন্তোষজনক তো নয়ই, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার দশা খুবই খারাপ। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর অবশ্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিছুটা নড়েচড়ে উঠেছে। সাতমসজিদ রোডের একটি ভবনে রেস্টুরেন্টের সংখ্যাধিক্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ভবনটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজউকের সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ ভবনটিতে রেস্টুরেন্ট থাকার কথা নয়, কারণ ভবনটির কর্তৃপক্ষ এখানে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করার অনুমোদন নেয়নি। তারা আরও বলেছেন, সাতমসজিদ রোডসহ রাজধানীর অনেক স্থানে আবাসিকের অনুমোদন নিয়ে
যারা বাণিজ্যিক কাজে ভবনগুলো ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদেরও কথা, শুধু সাতমসজিদ রোড নয়, গুলশান, বনানী, মিরপুর, উত্তরা, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর সব এলাকার বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শন করে সেগুলোয়ও বেআইনি কোনো কাজ করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগেও অনেক বহুতল ভবনে, বিশেষত বনানীর একটি ভবনে আগুন লেগে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া নিমতলি, বঙ্গবাজারসহ আরও বহু জায়গায় ভয়াবহ আগুনের স্মৃতি এখনো আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।
প্রকৃতপক্ষে, সমগ্র রাজধানীকে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডমুক্ত রাখা যায়, তার একটি মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। জরুরি নির্গমন পথ, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা এবং ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট যাতে সহজে ঘটনাস্থলে যেতে পারে, এসব সমস্যারও সমাধান করতে হবে। অধিকন্তু কোনো ভবনে আগুন লাগার কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা পৌনঃপুনিকভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে একটি সতর্কবার্তা দেবে, এটাই প্রত্যাশা।