সওজে ঠিকাদারদের জালিয়াতি
দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির কারণে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে গত বছর অক্টোবরে ১৩৮টি দরপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হতে যেমন দেরি হবে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রয়েছে।
এ অবস্থায় আগামী ৫ মাসেও এ কাজ শুরু করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আগামী ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় অনেক সড়কে ঈদযাত্রা ব্যাহত হবে। কারণ, এসব দরপত্রের আওতায় বেশিরভাগ কাজই ছিল সড়ক সংস্কারের। বিষয়টি উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, বাতিল হওয়া এই ১৩৮ দরপত্রের আওতায় ছিল ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। এ দুর্নীতিতে সওজের কিছু কর্মকর্তা ছাড়াও প্রভাবশালী ঠিকাদাররা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানারকম জালিয়াতির ঘটনা ঘটে থাকে। এবার প্রকাশ পেল অভিজ্ঞতা সনদ জালিয়াতির তথ্য। জানা যায়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সওজকে স্বচ্ছ দরপত্র মূল্যায়নে দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। এ লক্ষ্যে ২০১৭ সালে দুটি সফটওয়্যার ব্যবহারের সম্মতি দেয় সেন্ট্রাল প্রোকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। সওজের দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের দরপত্র মূল্যায়নে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে এ সফটওয়্যার ত্রুটিপূর্ণ করে রাখা হয়। ফলে সাড়ে ৬ বছরেও এ ডিজিটাল প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পন্ন করতে পারেনি সওজ।
অভিযোগ আছে, কয়েকজন ঠিকাদারের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন সওজের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। আমরা জানি, সরকারি কার্যক্রমে ঠিকাদার বাছাই করার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। এর দ্বারা অধিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে যোগ্য ঠিকাদার খুঁজে বের করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় কাম্য নয়। এর আগে সওজের দরপত্র প্রতিযোগিতায় জাল-জালিয়াতির এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট।
ইতোমধ্যে প্রায় ৬১ প্রভাবশালী ঠিকাদার এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। অবশ্য যাদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তাদের হাতেই নাকি রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ। এমনকি ব্যয়বহুল সব কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণও করে এ চক্র। সওজের সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীকে চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাদের দুর্নীতির কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে, তারা যেন কোনোভাবেই পার পেয়ে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।