রেল প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতা
সঠিক পরিকল্পনা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হোক
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কথা ছিল, রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র ৩ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। এ উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলরুটে তিন বছর মেয়াদি তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-দুই দফায় প্রকল্পটি সংশোধনের পর বলা হচ্ছে, কাজ শেষ হতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ তিন বছরের প্রকল্প শেষ হতে পেরিয়ে যাবে ১৫ বছর। অথচ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে রাজধানীর সঙ্গে ঢাকার উপকণ্ঠের যোগাযোগ দ্রুত ও সহজ হতো। এতে রাজধানীর ওপর কর্মজীবীদের চাপ কিছুটা হলেও কমত। সময়ক্ষেপণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় চারগুণ। বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। কারণ, গত এক যুগে প্রায় অর্ধশত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নতুন ট্রেন চালু হয়েছে ১৫২টি; কিন্তু শেষ করা যায়নি অতিগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রয়েছে পদে পদে বাধা। সেই বাধার অন্যতম কারণ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
যত বাধাই থাকুক, তিন বছর মেয়াদি কোনো প্রকল্প ১২ বছরেও শেষ না হওয়া এক্ষেত্রে যথার্থ যুক্তি হতে পারে না। যে কোনো প্রকল্প চূড়ান্ত করার আগে সার্ভেসহ অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে এর সমন্বয় হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করাই স্বাভাবিক নিয়ম। পরিতাপের বিষয়, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়, যার অন্যতম কারণ হচ্ছে, প্রায় প্রতিটি স্তরে দুর্বল পরিকল্পনা, অদক্ষতা, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলা। বিষয়টি বারবার আলোচনায় এলেও সমাধান হচ্ছে না। আমরা মনে করি, প্রকল্পের ধীরগতির কারণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনা হলে এমনটি ঘটত না। অতীতে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে যেমন ব্যয় বাড়ে; একই সঙ্গে বাড়ে জনদুর্ভোগ। দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে কাজের গুণগত মান বজায় রাখাও সম্ভব হয় না। কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।