Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

সওজে দরপত্র জালিয়াতি

সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সওজে দরপত্র জালিয়াতি

দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে অনিয়ম-দুর্নীতির নানা ঘটনা প্রায়ই আলোচিত হয়। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) দরপত্র প্রতিযোগিতায় জাল-জালিয়াতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সোমবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সওজে দরপত্রে জাল কাগজপত্র দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট। ইতোমধ্যে প্রায় ৬১ প্রভাবশালী ঠিকাদার এ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।

অবশ্য যাদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তাদের হাতেই নাকি রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ। এমনকি ব্যয়বহুল সব কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণও করে এ চক্র। পরিতাপের বিষয়, সওজের অভ্যন্তরীণ তদন্তে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এলেও এদের অধিকাংশকেই কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি। উলটো অভিযুক্তদের হাতেই রয়েছে ৩ হাজার ৭০০ কাজ, যা সওজের চলমান মোট কাজের অর্ধেক। এসব কাজে ব্যয় হচ্ছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সারা দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেই সংস্থার শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে জাল-জালিয়াতের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, সওজের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত দিনে অনিয়ম করে কীভাবে কাজ বাগিয়ে নিল? সাধারণত প্রতিটি দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়।

দরপত্রে দেওয়া নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ে সর্বনিম্ন দরদাতাকে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এর মধ্যে বিগত ৫ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়ে ১৪০ নম্বর পেয়ে থাকেন একজন ঠিকাদার। চলমান কাজের সংখ্যায় পেয়ে থাকেন ৬০ নম্বর। এছাড়া বিগত ৫ বছরে সম্পাদিত কাজের ব্যয় হওয়া মোট টাকার হিসাবে পেয়ে থাকেন ১০০ নম্বর। এখানে যেহেতু মোট পাশ নম্বরের প্রায় অর্ধেকই হলো অভিজ্ঞতার সনদে, সে কারণে অধিকাংশ ঠিকাদার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন।

কাজেই প্রশ্ন ওঠে, টেন্ডারে অংশগ্রহণের সময় দাখিলকৃত কাগজপত্রে অসামঞ্জস্যতা নজরে আসার পরও কেন এসব অসাধু ঠিকাদার ও প্রতিষ্ঠান কাজের সুযোগ পান? অভিজ্ঞতার সনদ কিংবা কাজ শেষ করার প্রকৃত তারিখ পরিবর্তনের মতো অপকর্মের পরও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কেন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না, এ রহস্য উদ্ঘাটনও জরুরি। উল্লেখ্য, দরপত্রে এ ধরনের ইচ্ছাকৃত অসত্য তথ্য প্রদান করার বিষয়টি স্পষ্টতই পিপিএ-২০০৯-এর ধারা ৬৪ এবং পিপিআর ২০০৮-এর বিধি ১২৭ অনুযায়ী অসদাচরণ ও অপরাধ হিসাবে বিবেচ্য।

মনে রাখা প্রয়োজন, সরকারের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ব্যাপক উন্নয়নের আলোর পেছনে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে রয়েছে অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যারা নানা দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের সফলতাকে ম্লান করায় লিপ্ত। জনগণের টাকা তছরুপ করে এরা দেশ-বিদেশে গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। সওজের যেসব কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ঠিকাদার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা নানাভাবে জালিয়াতি-অনিয়ম ও দুর্নীতির পথ ঠিকাদারদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেন, শুদ্ধি অভিযানে তাদেরও চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম