Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

নিম্ন আদালতে মামলাজট: সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিম্ন আদালতে মামলাজট: সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে

দেশের আদালতগুলোয় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে এ অবস্থা। মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হয় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায়। মামলা নিষ্পত্তিতে যদি বিলম্ব হয়, তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে মানুষের আস্থা কমে যায়। কাজেই মামলাজট থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি। দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার। বলা হয়ে থাকে, ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’। বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যান বলছে, আদালতগুলোয় মামলাজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এটি যে মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়, তা বলাই বাহুল্য।

মামলাজটের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাক্ষীর অনুপস্থিতি। রাজধানী ঢাকার কথাই ধরা যাক। ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণ, জবানবন্দি ও জেরার জন্য গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৩০ হাজারেরও বেশি সমন জারি করা হয়েছে। তবে তামিল হয়েছে জারি হওয়া সমনের অর্ধেকেরও কম। সাক্ষীর অনুপস্থিতির কারণে বেশিরভাগ ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ সদস্য যুগান্তরকে বলেছেন, সাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য প্রদান করাকে সময় ও অর্থের অপচয় মনে করেন। সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হতে যে খরচ হয়, তা সাক্ষীকে প্রদানের বিধান থাকলেও এর বাস্তবায়ন নেই। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যেও সাক্ষ্য দিতে গড়িমসি করা হয়। আবার পুলিশ সাক্ষীরা বদলি হওয়ার পর আগের কর্মস্থলের মামলার সাক্ষ্য দিতে বিলম্ব করেন। আমরা মনে করি, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত। সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত দুর্বলতা থাকলে তা দূর করতে হবে।

বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার আরও অনেক কারণ আছে। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের আদালতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। দেশের আদালতগুলোয় এখনো সেকেলে পদ্ধতি বহাল রয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক বিচারক নিয়োগ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মামলাজট খুলতে সহায়ক হতে পারে। তবে কার্যকর ও ডায়নামিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে বেশিরভাগ মামলা-মোকদ্দমা জমিজমাকেন্দ্রিক। জমির যত বিভাজন হবে, নিঃসন্দেহে এ জটিলতা তত বাড়বে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আদালত ব্যবস্থাপনা এবং মামলা ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। আদালত ব্যবস্থাপনা ও মামলা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মামলার উভয়পক্ষকে ‘টোটাল জাস্টিস’ দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে মামলা দায়ের, নোটিশ জারি, নকল প্রাপ্তিসহ সব ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে দেশের আদালতগুলোয় বিদ্যমান মামলাজট কমে আসবে। আমরা আশা করব, মামলার জট খুলতে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগসহ আরও যা কিছু প্রয়োজন, তা দ্রুত করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম