ডলার আয়-ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতা
সংকট নিরসনে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে ডলার সংকটের মূল কারণগুলো বহুল আলোচিত। এ সমস্যার সমাধানে কী করণীয়, তাও বারবার আলোচনায় আসে। কিন্তু এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। কয়েক বছর ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা আয়ব্যয়ের হিসাবে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। প্রায় দুবছর দেশে ডলার সংকট তীব্র। ডলার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় সংকট বেড়েছে। দেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি। এতে সংকট বেড়েছে। জানা যায়, এ সংকটের টেকসই সমাধানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর অংশ হিসাবে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশে আমদানিনির্ভরতা কাটানো সম্ভব না হলে এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হতে পারে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। রপ্তানির নতুন বাজার এবং রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের বিষয়টি বহুদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে। দেশে যেসব কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়, সেসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত সমস্যার টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা না হলে কেবল পরিকল্পনা করে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এজন্য দেশে বিনিয়োগের বাধাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দূর করতে হবে।
দেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। একই বছরে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৫ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ফলে ডলারের ঘাটতি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। একই বছরে আমদানি হয়েছিল ৫ হাজার ৭২৬ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। ওই বছর আয় বাড়ার তুলনায় ব্যয় বাড়ার হার কমলেও সার্বিকভাবে ঘাটতি ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি বেড়ে যায়। ফলে ঘাটতিও বাড়ে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে ব্যয় কমেছে, আয় কিছুটা বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি হয় ২ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। ওই বছরের একই সময়ে আমদানি হয় ৪ হাজার ১১৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য আনার চেষ্টা চলছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে, নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে।
ডলার সংকট মোকাবিলায় অর্থ পাচার বন্ধে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপরও গুরুত্ব বাড়ানো দরকার। প্রবাসীরা যাতে তাদের উপার্জিত অর্থ বৈধ পথে দেশে পাঠান, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। হুন্ডি রোধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। দুর্নীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ডলার সংকটকে তীব্র করে তুলছে। কাজেই দুর্নীতি রোধে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।