Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

অপরিকল্পিত পূর্বাচল সড়ক, অপচয় রোধ করা প্রয়োজন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অপরিকল্পিত পূর্বাচল সড়ক, অপচয় রোধ করা প্রয়োজন

দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থার বিষয়টি বহুল আলোচিত। কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে যেমন যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার, তেমনি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে সেই প্রকল্প জনস্বার্থে কাজে আসে না। যেমনটা হয়েছে ঢাকার পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষেত্রে।

সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়। অথচ পূর্বাচল সড়কে এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে মাত্র ১২ কিলোমিটার সড়কে, যার দুই প্রান্তে রয়েছে আবার সরু সড়কও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদূরদর্শী এমন পরিকল্পনায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫২৪ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ৭৬৪ কোটি টাকায় তৈরি ওই সড়ক রাজধানীর সড়কের আদলে নির্মাণ করলে খরচ হতো সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি টাকা। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তড়িঘড়ি নির্মাণ করা রাজউকের এ এক্সপ্রেসওয়ে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে মেট্রোরেল-১-এর নির্মাণকাজের কারণে আবার ভাঙতে হবে। সেটি হলে অতিরিক্ত খরচে নির্মিত এই এক্সপ্রেসওয়ের অপচয়ের হিসাব আরও বাড়বে।

জানা যায়, পূর্বাচল সড়কের সংস্কার ও আধুনিকায়নের নামে ২০১৩ সালে সেখানে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনের সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে ব্যয় বাড়িয়ে ৪২৪ কোটি টাকায় নির্মাণকাজ শেষ করা হয়। এর তিন বছর পর কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পূর্বাচল সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়।

ওই প্রকল্পে পূর্বাচলের নতুন সড়ক ভেঙে ৭৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। এখন এ সড়ক মেট্রোরেলের কাজের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাজউককে আবারও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে; তখন নানা অনুষঙ্গ যুক্ত করে মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে হাজার কোটি টাকা।

পূর্বাচল উপশহর নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে রাজউক কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডটি প্রশস্ত করেছে। ভবিষ্যতে পূর্বাচল সড়কটি সিলেট হাইওয়ের সঙ্গে মিলবে। সে হিসাবে রাজউক চার লেন সড়ক বাইরের যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, সেটা ভালো উদ্যোগ। তবে এক্সপ্রেসওয়েটি যেখানে গিয়ে মিলবে সেটা এক্সপ্রেসওয়ে নয়। আমরা মনে করি, এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সব দিক যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়া উচিত ছিল। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটে থাকে। আমরা দেখছি, সড়কে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও যানজট সমস্যার সমাধান মিলছে না। বরং দিন দিন তা প্রকট আকার ধারণ করছে। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে একদিকে রাস্তাগুলো সংকুচিত হচ্ছে; অন্যদিকে পরিবহণের সংখ্যা বাড়ছে। কম সড়কে বেশি যানবাহন চলাচল করায় স্বভাবতই একদিকে সেগুলোর গতি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এর ধকল নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা। তাই কোনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম