দুর্নীতির সূচকে অবনমন
প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) সর্বশেষ প্রকাশিত দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচকে আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১০তম, যা আগের বছর ছিল ১২তম। এছাড়া দুর্নীতির পরিস্থিতি উন্নয়নসংক্রান্ত স্কোরেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১০০ নম্বরের মধ্যে এবার বাংলাদেশ ২৪ নম্বর পেয়েছে, গত বছর যা ছিল ২৫। এ অবস্থান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। দুর্নীতির এ অবনমন উদ্বেগজনক।
দেশে যে দুর্নীতি আছে, তা সরকারও স্বীকার করে। তা সত্ত্বেও টিআই’র প্রতিবেদন অস্বীকার করার একটি প্রবণতা লক্ষ করি আমরা। এটি দুঃখজনক। প্রকৃতপক্ষে দেশে দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হয় কম। দুর্নীতিবাজদের কারণে দেশের প্রায় সব সেক্টরে অনিয়ম রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, সত্যিকার অর্থে তারা বিচারের আওতায় আসে না। দুদক কিছুটা কাজ করলেও তা সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ বলেই অনেকের অভিযোগ। সেখানে শুধু চুনোপুঁটিদের ধরা হলেও রাঘববোয়ালরা বিচারের বাইরেই থেকে যায়। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশেও চাপ রয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে হয়রানির শিকার হওয়ার নজিরও দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দুর্নীতি রোধে, তবে তা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আসেনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তবে মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করে, অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই দুর্নীতির লাগাম কঠোর হাতে টেনে ধরা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে সবার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দুর্নীতি রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান এবং দৃশ্যমান শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবে কোনো ভুল পদক্ষেপে যেন নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশকিছু সুপারিশ করেছে টিআইবি। এগুলো হলো-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং অবাধ গণমাধ্যম ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমরা আশা করব, যে কোনো দুর্নীতির ক্ষেত্রে সত্যতা যাচাই ও তা রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।