নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাই
সমস্যাগুলো দূর করতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিরবছিন্ন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও তখন শিল্পের স্বার্থে শিল্প মালিকরা বাড়তি দাম মেনে নিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলো, বর্তমানে বাড়তি দামেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস মিলছে না। দ্রুত এ সংকটের সমাধান না হলে বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন বিটিএমএ সভাপতি। সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে, ডলার সংকট চলমান। এসব কারণে উদ্যোক্তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবছিন্ন সরবরাহ না থাকলে উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, যা বলাই বাহুল্য।
দেশে বর্তমানে গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। জানা যায়, এক মাস ধরে চট্টগ্রাম, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, আড়াইহাজার ও নারায়ণঞ্জে গ্যাসের গড় চাপ ছিল ০-২ পিএসএফের মধ্যে। ১৫ দিন ধরে নারায়ণগঞ্জে বিসিকের আশপাশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অথচ গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও মিলগুলোকে ন্যূনতম গ্যাস বিল বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে মিল বন্ধ থাকায় উৎপাদন না হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণ, পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে শিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থা পূর্ণ সক্ষমতায় ধরে রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও সদয় নির্দেশনা কামনা করা হয়েছে।
গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হলে প্রতিটি শিল্প খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াসহ শিল্প খাতে নানাবিধ নতুন সংকট তৈরি হবে। বস্তুত গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ খাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। দেশি বিনিয়োগকারীরাও যদি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে শিল্পায়ন ঘটবে কীভাবে?
অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারকে দেশীয় শিল্পের বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। দেশে গ্যাসের চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের বিস্তর ফারাক রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ত্রুটিহীন রেখে এর দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা প্রয়োজন। তা না হলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কর্মসংস্থান হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থাকলেও অনুসন্ধান কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। আমাদের সাগর এলাকায়ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা হলে আশা করা যায় এ প্রতিষ্ঠান দেশবাসীকে গ্যাস খাতে বড় ধরনের সুখবর দিতে সক্ষম হবে।