নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতা
বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
ট্রেন কিংবা বাস, যাত্রীবাহী চলন্ত পরিবহণে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এ ধরনের ঘৃণ্য ও পৈশাচিক কাজ যারা করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই। নির্বাচন সামনে রেখে এবারও দুষ্কৃতকারীদের হাতে এমন নৃশংস ঘটনা একাধিকবার ঘটতে দেখা গেছে। সবশেষ রাজধানীর গোপীবাগে শুক্রবার রাতে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় নারী ও শিশুসহ চারজন পুড়ে মরেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে একটি দলের সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছে। আগুনের পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেফতারও করেছে। ডিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের আগে অভিযুক্তরা ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ছিল। র্যাবও জানিয়েছে, এ ধরনের সম্ভাব্য নাশকতার তথ্য তাদের কাছেও ছিল; কিন্তু কোথায় হবে তা জানা ছিল না। চরম সত্যিটা হলো, নাশকতা ঠেকানো যায়নি। ফলে প্রাণ দিতে হয়েছে নিরীহ মানুষকে।
যে কোনো নাশকতা রুখতে প্রতিটা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে থাকে। এরপরও কোনো ঘটনা ঘটে গেলে এর ব্যর্থতার দায়ভার এসব সংস্থাকে নিতে দেখা যায়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশে সংঘটিত অনেক নাশকতার ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করা যায়নি। অধিকাংশ ঘটনাই এখনো তদন্তাধীন। এদিকে শুক্রবারের নাশকতার জন্য রেলমন্ত্রী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে ট্রেন-বাসসহ গণপরিবহণে অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচনের বিরোধিতাকারীরা বলেছেন, একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেউ যাতে কিছু করতে না পারে, সেজন্য এজেন্টদের দিয়ে সরকারই এসব নাশকতা চালিয়ে তার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। ভুলে গেলে চলবে না, নাশকতার পরপরই কোনো পক্ষের এমন আগাম মন্তব্য স্বভাবতই তদন্তকার্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তদন্তের পর সত্যটাকেও করতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ।
নির্বাচনের আগ থেকেই দেখা গেছে, দেশে মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেললেও রাজনীতির মাঠ ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ। নির্বাচনের আগে পরিবহণে আগুন, নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, প্রতিপক্ষের হাতে হতাহতের মতো একাধিক ঘটনা ঘটলেও তা রোধে ছিল না কার্যকর পদক্ষেপ। নির্বাচনের দিনও একাধিক সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ভুলে গেলে চলবে না, গণতান্ত্রিক দেশে সব রাজনৈতিক দলকেই জনগণের কথা মাথায় রেখে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হয়। কারণ রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের স্বার্থরক্ষা। পাশাপাশি দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভোগান্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সচেষ্ট থাকতে হয়। মনে রাখতে হবে, নির্বাচনকেন্দ্রিক এ ধরনের নাশকতা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনসমর্থনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। নাশকতার ঘটনায় আমরা দেখছি, সরকার ও বিরোধীদলগুলোর ভেতরে পারস্পরিক দোষারোপের প্রবণতা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। গতকালই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর কোনো পক্ষ যাতে সহিংসতায় জড়িয়ে জনজীবনকে ব্যাহত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনারোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও থাকতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতায়। এ পর্যন্ত যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে কারা দায়ী তা জনসম্মুখে বেরিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশা।