বই উৎসব
সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যের বই বিতরণ করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অনেকেরই নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাই একসময় অনেককেই পুরোনো বই দিয়ে বছর পার করতে হতো। এখন সবার হাতে থাকে নতুন বই।
প্রতিবছর বই বিতরণকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি কোমল প্রাণে যে উৎসবের ছোঁয়া লাগে, তাতে এক ধরনের সর্বজনীনতা রয়েছে। তবে কোনো কোনো বছর বিনামূল্যের বিতরণকৃত সব বই সময়মতো প্রকাশ করা যায়নি। বিতরণকৃত কিছু বইয়ের মুদ্রণ বিভ্রাট, পাতা এলোমেলো থাকা, ছাপার মান খারাপ হওয়া-এসব অভিযোগ এসেছে অতীতে।
এত বিশাল কর্মযজ্ঞে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা। বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির ব্যর্থতা অথবা দুর্নীতির কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। সীমাবদ্ধতা ও ভুলত্রুটিগুলো শুধরে এ কর্মসূচিকে কীভাবে পুরোপুরি সফল করা যায়, সেদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
অভিযোগ রয়েছে, মুদ্রাকরদের একটি অংশ ইচ্ছা করেই বই মুদ্রণে দেরি করে। এর মূল কারণ হলো, যখন ১ জানুয়ারি চলে আসে, তখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বইয়ের মানের চেয়ে সরবরাহের দিকে অধিক গুরুত্ব দেয়। এতে নিুমানের কাগজে বই সরবরাহের পথ সুগম হয়। আমরা লক্ষ করেছি, ২০২২ সালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বইয়ের ঘাটতি নিয়েই নতুন বছর শুরু হয়েছিল।
আমাদের প্রত্যাশা ছিল, গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে কর্তৃপক্ষ সীমাবদ্ধতা ও বাধা অতিক্রম করে সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, এ বছর অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বই দেশের অনেক উপজেলায় পৌঁছেনি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেন বিনামূল্যে বিতরণের সব বই দেশের সব উপজেলায় সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে কারও কোনো গাফিলতি থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বিনামূল্যের বই বিতরণসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে সন্তানের শিক্ষার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আমরা মনে করি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও অনেক কিছু করার আছে। বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতার কারণে গরিব মানুষ কতটা অস্বস্তিতে রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে শিক্ষা উপকরণের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বহু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সে জন্য সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা জরুরি। কাজেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিত মজবুত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তা সম্ভব না হলে জ্ঞানমুখী সমাজ নির্মাণে ঝুঁকি বাড়বে।