অব্যাহত লেভেল ক্রসিং দুর্ঘটনা
আর কত প্রাণহানির পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের বেশিরভাগ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত থাকায় কয়েকদিন পরপর দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গতকাল ময়মনসিংহের শহরতলী শম্ভুগঞ্জের রঘুরামপুর এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে কমিউটার ট্রেন ও বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এছাড়া গত রোববার যশোরে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রাক-ট্রেনের সংঘর্ষে ট্রাকের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান ও প্রতিবন্ধক আছে, সেগুলোতেও সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অসতর্কতার কারণে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত ১০ বছরে রেল দুর্ঘটনায় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছেন। লেভেল ক্রসিংয়ে ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে বহু আলোচনা হয়। প্রশ্ন হলো, অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কেন? জানা যায়, সারা দেশে রেলওয়ের ২ হাজার ৮০০-এর বেশি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে ১ হাজারেরও বেশি। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, বহু লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। অর্থাৎ কোনো গেটম্যান নেই। গেটম্যান আছে অল্পসংখ্যক লেভেল ক্রসিংয়ে । প্রশ্ন হলো, অনেক বৈধ লেভেল ক্রসিংও অরক্ষিত কেন?
অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোয় একটি নোটিশ টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে রেল বিভাগ। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। লেভেল ক্রসিংয়ে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেখানে কোনো প্রহরী না থাকা-এটি যেমন ঠিক, তেমনি এক্ষেত্রে পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও তাদের দায় এড়াতে পারেন না। দুর্ঘটনা রোধে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে লেভেল ক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকারীদেরও আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়া উচিত।
প্রতিটি রেল দুর্ঘটনার পর এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা তা জানা যায় না। অভিযোগ আছে, এ নিয়েও চলে অবৈধ বাণিজ্য। কমিটি যাদের দায়ী করে তাদের অনেকে ঊর্ধ্বতন অসাধু কর্মকর্তার কাছে ছুটে গিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুস দিয়ে শাস্তি কমিয়ে আনেন। এ পরিস্থিতি বজায় রেখে রেল দুর্ঘটনা কমানো যাবে কি? বস্তুত রেলের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রেল খাতে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হলেও রেলের সামগ্রিক উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
চাহিদা ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও জরাজীর্ণ ও সংস্কারহীন রেলপথ এবং লেভেল ক্রসিং নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তেমন কিছু ভাবছেন বলে মনে হয় না। জরাজীর্ণ রেলপথসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য সমস্যার সমাধান না হলে যাত্রীসেবার মান বাড়বে কী করে? রেলের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি লেভেল ক্রসিংয়ের ঝুঁকি নিরসন এবং যাত্রীসেবার মান উন্নয়নেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। রেলে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। রেলকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন বিবেচনা করা হয়। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে রেলের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।