শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি
দুর্ভোগ লাঘবে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত কয়েকদিনে ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় শীত বেড়েছে। এ সময় ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা কমেছে উত্তরাঞ্চলে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, সোমবার নওগাঁর বদলগাছীতে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
আজ থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসবে, যা বজায় থাকবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও ঢাকায় তীব্র শীত অনুভূত হবে। কারণ, রাজধানীতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য এ সময় ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসবে। এরই মধ্যে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে মহানগরীসহ পুরো রংপুর অঞ্চল।
নওগাঁয় বৃষ্টি ও উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী। দিনাজপুরের হিলিসহ আশপাশের এলাকাগুলো দুদিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে। দিন-রাত কুয়াশায় ঢেকে থাকায় কুড়িগ্রামে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না ঘর থেকে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ।
স্বভাবতই শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি। শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ। অসুস্থ হয়ে পড়েন শিশু ও বৃদ্ধরা। তাদের প্রতি তাই বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের যাতে কষ্ট না বাড়ে সে ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঠান্ডাজনিত রোগ এড়াতে মানুষ এ সময় আদা-চা খেয়ে থাকেন; কিন্তু বর্তমানে আদার যে বাজারদর, তাতে নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে প্রয়োজনীয় আদা ক্রয় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।
এ সময় অসতর্কতায় শরীরের কাপড়ে আগুন লেগে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, তাই বাড়তি সতর্কতা জরুরি। এছাড়া ঠান্ডায় কয়েক ধরনের ভাইরাস অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। হাসপাতালগুলোয় এসব রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
কুয়াশাচ্ছন্ন এলাকায় সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়, তাই যানবাহন চলাচলে অবলম্বন করতে হবে বাড়তি সতর্কতা। এদিকে নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়া যেসব মানুষ কাজের সন্ধানে শহরে আসেন, তাদের বড় সমস্যা হলো টেকসই আবাসন। ফলে সারা বছরই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দরিদ্রদের মাঝে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র ও ত্রাণসামগ্রী প্রদান করা হলেও সেটা যে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই ছিন্নমূল মানুষের টেকসই আবাসনসহ জীবনমান বাড়াতে নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। হাড়কাঁপানো শীতে হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ যাতে না বাড়ে, সে জন্য এখনই নিতে হবে প্রস্তুতি। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। তীব্র শীতের কারণে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বরাবরের মতো বেসরকারি সংস্থা এবং বিত্তবানদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটাই প্রত্যাশা।