দেশব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ, কৌশলগত নজরদারি বাড়াতে হবে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শীত এসে গেলেও দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার কমেনি। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও গত বছরের তুলনায় তা এখনো বেশি।
বস্তুত ডেঙ্গু সংক্রমণ এখন আর মাস বা ঋতুতে সীমাবদ্ধ নেই। এ পরিস্থিতি চলমান থাকা অবশ্যই উদ্বেগজনক। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সোয়াগুণ, মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গু সংক্রমণের রাশ টানতে না পারায় অনেকের পরিবার-স্বজনের চোখের সামনে ঝড়ে যাচ্ছে তরতাজা প্রাণ। এমনটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার নয়।
এ অবস্থায় বিষয়টিকে শুধু প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর কৌশলগত নজরদারির ঘাটতি এর অন্যতম কারণ। তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার প্রজনন বেশি হওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণও বেশি হয়। তবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে সব ঋতুতেই মশার বিস্তার ঘটছে। এ বছর ৬৪ জেলাতেই রোগটি শনাক্ত হয়েছে।
শহরের পাশাপাশি গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণের নির্ধারিত মৌসুম শেষ হওয়ার পরও প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু যে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তাই নজরদারি বাড়িয়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে যথাযথভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী বছরজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও ভয়ংকর হতে পারে, প্রাণহানির শঙ্কাও বাড়তে পারে। মূলত বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং মশা নিধন ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এ সমস্যাকে প্রকট করে তুলেছে। বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগেও এডিস মশার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারেও এসেছে পরিবর্তন। অন্যদিকে মশা নিধনে নজরদারি ও গবেষণাভিত্তিক কর্মকৌশল প্রয়োগের প্রয়োজন থাকলেও তা হচ্ছে না। আবার মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড সাধারণত বড় বড় শহরে চোখে পড়লেও গ্রামে তেমনটা নেই। গ্রামের মানুষের করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট কোনো বার্তা চোখে পড়ে না। ফলে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া না হলে গ্রামেও ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।
এটা ঠিক, একটি দেশে বা অঞ্চলে একবার ডেঙ্গু দেখা দিলে তা আর যায় না, ফিরে ফিরে আসে। তবে আগাম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে, বিশেষ করে সময়মতো মশকনিধন কর্মকাণ্ড হাতে নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন স্থানে এমন নজির আছে। কাজেই বাংলাদেশ থেকে ডেঙ্গু একেবারে নির্মূল হবে না, এটা মেনে নিয়েই ঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে এ বছর ডেঙ্গু এতটা ছড়াত না। পরিস্থিতি আরও খারাপ যাতে না হয়, তাই এখনই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় এডিস মশার ভয়াল থাবায় জনজীবন আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে। জনস্বার্থে সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।