ব্যাংক ঋণের উচ্চসুদ
শিল্প খাতে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পাঁচ মাস আগেও ব্যাংক ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ; ধীরে ধীরে এখন তা প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ ছুঁয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে নানা রকম হিডেন চার্জ। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, এভাবে সুদের হার বাড়তে থাকলে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হবে; বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুদহার আরও বাড়লে তা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে; উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে; রপ্তানি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে দেশ। এমনিতেই এখন সেভাবে নতুন শিল্প হচ্ছে না। ডলারের অভাবে মূলধনি যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে। কাজেই ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমলে কর্মসংস্থানে এর প্রভাব পড়বে।
সম্প্রতি নীতি সুদহার বাড়ানোর চার দিন পর নতুন ‘স্মার্ট’ সুদহার নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিসেম্বরের জন্য স্মার্ট সুদহার নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, নভেম্বরের জন্য যা ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে স্মার্ট সুদহার বাড়ল ২৯ বেসিস পয়েন্ট, গত ছয় মাসে প্রকাশিত সুদহারের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন খাতে বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে বহু উদ্যোক্তা হিমশিম খাচ্ছেন। তার ওপর ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লে শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে সুদহার ১২ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। কোনোভাবেই উচ্চসুদ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না। সুদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সর্বত্র এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এদিকে ‘রেপো রেট’ ফের বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঋণের চাহিদা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ ঠিক করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুলাই থেকে আগের সীমা তুলে দিয়ে সুদহারের নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হয়। শুধু তাই নয়, ঋণ ও আমানতের সুদহারের যে ব্যবধান (স্প্রেড) সেটাও প্রত্যাহার করা হয়। ফলে হু হু করে বাড়ছে সুদহার।
ঋণের উচ্চ সুদহার দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের শিল্প খাত যাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সক্ষম হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বস্তুত ব্যাংকগুলো অধিক হারে সুদ আরোপ করেই ক্ষান্ত হয় না, পদে পদে সার্ভিস চার্জ আরোপের মাধ্যমে বহু ব্যাংক আগ্রাসী আচরণ করে থাকে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এসব দিকেও দৃষ্টি দেওয়া। সুদহার কম হলে শিল্প খাতে কাঙ্ক্ষিত গতি বজায় থাকবে, এটি আশা করা যায়। সুদহার বাড়লে বিনিয়োগ কমবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে। কাজেই দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়েই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।