অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস
জনসচেতনতা ও সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে প্রচলিত বেশকিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায়, বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ৮২ শতাংশ কার্যকারিতা হারিয়েছে; পাঁচ বছর আগে যা ছিল ৭১ শতাংশ।
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের পরিস্থিতি কী, তা জানতে ২০১৭ সাল থেকে গবেষণা করছে আইইডিসিআর। এ বছর জুন পর্যন্ত চলে এ গবেষণা। সাত বছরে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার মিলে প্রায় ৪০ হাজার নমুনা নিয়ে এ গবেষণাকাজ পরিচালনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারকদের অতিরিক্ত ব্যবসায়ী মনোভাব, অপ্রয়োজনে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লেখার প্রবণতা এবং ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এ সমস্যার সমাধান পেতে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ ইনফেকশনে বিশ্বজুড়ে বছরে মারা যাচ্ছে ৫০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশেও বহু মানুষ এ রোগে মারা গেছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বেশি হচ্ছে।
দেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। মানুষের যেসব ভুলের কারণে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, তা নিয়ে বহু আলোচনা হলেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। অসচেতনতার কারণে অনেকে বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। অনেকে কোর্স শেষ না করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেন, যে কারণে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারায়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, শুধু চিকিৎসাক্ষেত্রে নয়; উৎপাদন বাড়াতে দেশের পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশারিজ শিল্পেও ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে তাজা সবজিতেও ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ লক্ষ করা গেছে। জীবন রক্ষাকারী অতি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হওয়া উচিত পরিমিত ও প্রয়োজন অনুযায়ী। দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও নির্বিচার ব্যবহারের কারণে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হবে, যা বলাই বাহুল্য।
গরিব মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে নিকটবর্তী ওষুধের দোকানে কর্মরত ব্যক্তিদের পরামর্শে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। কাজেই গরিব মানুষ যাতে স্বল্প অর্থের বিনিময়ে বা বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা দরকার। অনৈতিক বাণিজ্যিক চিন্তা থেকেও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। এ বিষয়ে চিকিৎসক সমাজসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
অ্যান্টিবায়োটিক বিপণনে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিদিন আমরা যেসব খাবার খাই, সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা না হলে এ সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
রোগ প্রতিরোধে যেসব নিয়ম মানা উচিত সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললে কম জটিল রোগেও মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কাজেই অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। নিম্ন-আয়ের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ক্ষতি হবে জেনেও তারা বারবার একই ভুল করবে।